চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

এমটিএফই’র ফাঁদে পড়ে ৮ লাখ মানুষ ‘পথের ফকির’

অনলাইন ডেস্ক

২৯ আগস্ট, ২০২৩ | ১০:২০ অপরাহ্ণ

গত ১৭ আগস্ট হঠাৎ এমটিএফই-র অ্যাপ বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের বিনিয়োগ করা অর্থ উধাও। উল্টো তাদের ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। বাংলাদেশ ছাড়াও নাইজেরিয়া ও শ্রীলঙ্কার অসংখ্য মানুষও বিনিয়োগ করেন এই প্ল্যাটফর্মে। এটি অনেকটা পঞ্জি স্কিমের মতোই ছিল। বিনিয়োগকারীরা নতুন কাউকে দিয়ে বিনিয়োগ করাতে পারলে অতিরিক্ত বোনাস দেওয়ার মতোও অফার ছিল এমটিএফই-র।

প্রথমদিকে এমটিএফই অ্যাপে যুক্ত প্রত্যেকেই ৬১, ২০১, ৫০১, ৯০১ ও ২ হাজার ডলার ডিপোজিট করেন। বেশি টাকা আয় করতে কেউ কেউ ৫ হাজার ডলারের বেশিও বিনিয়োগ করেছেন। কেউ জমানো টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কেউবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ জমি বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেন। কিন্তু গত ১৭ আগস্ট সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে গ্রাহকদের টাকা তোলার সেবা বন্ধ করে এমটিএফই।

জানা গেছে, এমটিএফই-র অ্যাপের মাধ্যমে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে পরবর্তী মাস থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পেতেন একজন বিনিয়োগকারী। এভাবে একজন থেকে আরেকজন অর্থাৎ যতজন বিনিয়োগ করবেন আগের ব্যক্তি তত বেশি লাভ পাবেন ভিত্তিতে এমটিএফই অফার দিতো।

একজন বিনিয়োগকারী নিজের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে এমটিএফই অ্যাপ ডাউনলোড করে অ্যাকাউন্টে লগইন করে নিজের করা বিনিয়োগ ও লাভ মুহূর্তেই দেখতে পেতেন। এছাড়া তার নিচে কতজন বিনিয়োগ করেছে সেটিও দেখা যেত। এমটিএফই-র অ্যাপটিতে ডিপোজিট, উইথড্রয়াল, ক্যাপিটাল ফ্লো, ট্রানজেকশন মুড, পারসোনাল ইনফরমেশন, ইনভাইট ফ্রেন্ডস ও কাস্টমার সার্ভিস ৭x২৪ নামে অপশন ছিল।

বাংলাদেশে এমটিএফইর ছিল না কোনো কার্যালয়, ছিল না কোম্পানির কোনো চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নাম-ঠিকানা। মোবাইলেই সব কাজ হতো। বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করতে এমটিএফই প্রতিনিধি বা সিইও নিয়োগ করতো। দেশের বিভিন্ন জেলায় এ রকম শত শত প্রতিনিধি বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এখন পর্যন্ত চার শতাধিকের বেশি সিইও রয়েছে বলে জানা গেছে। দেশে কোনো কার্যালয় না থাকলেও গত বছরের শেষ দিক থেকে এমটিএফইর কার্যক্রম শুরু হয়। ঘরে বসে সহজে আয়ের পথ বলে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চালায় তারা। বিভিন্ন ভিডিও ও বিজ্ঞাপন দেখেও ভুক্তভোগীরা আগ্রহী হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমটিএফই-র গ্রাহক সংখ্যা ছিল আট লাখ। লাখ লাখ গ্রাহক থেকে অর্থ হাতিয়ে এমটিএফই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আসলে কত টাকা এমটিএফই দেশ থেকে পাচার করেছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এখনও। তবে, এখন পর্যন্ত চলা তদন্তে এটা প্রায় নিশ্চিত এমটিএফই দেশ থেকে টাকা পাচার করে থাকলে, সেটি মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করেছে। পাচার হওয়া টাকার পরিমাণও কয়েক হাজার কোটি।

সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে কোনো অফিস না থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ঘরে বসে সহজে আয়ের পথ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এমটিএফই-র রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জমা দিতে হয়েছে গ্রাহকদের। ভার্চুয়ালি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচা করা হলেও লভ্যাংশ দেওয়া হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এসবের ফুটপ্রিন্ট রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অভিযোগ নিয়ে অনেক গ্রাহক সিআইডিতে আসতে শুরু করেছেন। তাদের মামলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট