তিন কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। কারণসমূহ হল ডিমের টাঙ্গাইল কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট, ঢাকার তেজগাঁওয়ে ডিমের দর নিয়ে মেসেজ ব্যবসা এবং কর্পোরেট খামারি। এসব জায়গায় সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। চট্টগ্রামের একাধিক ডিম ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও খামারিরা প্রতিটি ডিম ১০ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারেন না। বাকি টাকা মধ্যস্বত্বভোগী এবং টাঙ্গাইল ও তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের চাহিদার ৮০ শতাংশ ডিম আসে টাঙ্গাইল থেকে। দিনে ১৫ থেকে ১৮ গাড়ি ডিম আসে। এক গাড়িতে এক লাখ ৪৪ হাজার ডিম ধরে। সে হিসাবে পাহাড়তলী বাজারে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ ডিম আসে। এখান থেকে সারা চট্টগ্রামে ডিম যায়। গত রবিবার টাঙ্গাইলে ডিমের বাজার ছিল প্রতিটি ১০ টাকা ৭০ পয়সা। শুক্র, শনি এবং রবিবার চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা টাঙ্গাইল থেকে ডিম আনেনি। তাই দাম পড়তির দিকে ছিল। গত রবিবার জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা শেষে ফের পাইকারি বাজারে ডিম বেচা-কেনা শুরু হলে টাঙ্গাইলে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। গতকাল সোমবার তা ১১ টাকা থেকে ১১ টাকা ৫ পয়সা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ১১ টাকা ৫০ পয়সায়। খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন ১৫৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রায় প্রতিটির দাম প্রায় ১৩ টাকা।
ডিমের বাজারের আরেক নিয়ন্ত্রক ঢাকার তেজগাঁও সমিতি। তেজগাঁও সমিতি ডিম বিক্রি করে রাতে। সারারাত বিক্রি করে এরা দিনের বেলা ঘুমায়। রাতে বিক্রি করে সকালে ঘুমানোর আগে ডিমের দরের একটি মেসেজ সারাদেশে পাঠিয়ে দেয়। সকালের ওই মেসেজ সারাদেশের ডিমের পাইকাররা অনুসরণ করে। তেজগাঁওয়ে যেসব আড়ৎ রয়েছে তার মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি বসে দর নির্ধারণ করে সারাদেশের আড়তগুলোতে মেসেজ পাঠায়। এর বিনিময়ে তারা প্রতিমাসে টাকা নেয়। ডিম বিক্রি করে যে লাভ হয় তার চেয়ে বেশি লাভ করে মেসেজ বিক্রি করে।
আরেকটি কারণ হল কর্পোরেট কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানিগুলো প্রতিদিন লাখ লাখ ডিম বিক্রি করে। তারা অনেকটা নিলামে তুলেই ডিম বিক্রি করে। এরা অনলাইনে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডিম বিক্রি করতে গিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস শুক্কুর লিটন পূর্বকোণকে বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানির প্রতিবাদে শুক্র, শনি এবং রবিবার তিনদিন ডিম বিক্রি বন্ধ ছিল। অহেতুক হয়রানি করা হবে না জেলা প্রশাসকের এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার থেকে ডিম বিক্রি শুরু হয়েছে। ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণও জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। তবে ডিম কেনা এবং বিক্রির রশিদ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে কোন সমস্যা হবে না বলে জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে, গত রবিবার রাত থেকে টাঙ্গাইলে ডিমের অর্ডার বেড়ে গেলে গতকাল সোমবার সেখানে ডিমের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৫ পয়সা পর্যন্ত হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দাম আরো বাড়বে। ডিমের এই দাম বৃদ্ধির সাথে চট্টগ্রামের ডিম ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই। কারণ যে দামে তারা ডিম কিনেন তার সাথে পরিবহন ব্যয় যোগ করে ন্যূনতম লাভে বিক্রি করে দেন।
পূর্বকোণ/আরডি