চট্টগ্রাম রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

আজ বিদ্রোহী কবির ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ আগস্ট, ২০২৩ | ১:০২ অপরাহ্ণ

কবি কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালে ২৫ মে (১১  জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহা-বিদ্রোহের রণতূর্য বাদক, যৌবনের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিরাটত্ব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের আকাশ যখন পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঠিক সেই সময় কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। সেই আবির্ভাব পর্বেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ধূমকেতু হতে আসেননি, ধ্রুব তারা হতে এসেছেন এবং ধ্রুব তারা হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাব ও তত্ত্বের জায়গায় প্রেম এবং দ্রোহ, নিগূঢ় দর্শনের জায়গায় সাম্য-মানবতার গান গাইলেন নজরুল। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে যে নামটি উচ্চারিত হয়, সেটি কাজী নজরুল ইসলাম।

 

তিনি শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ধারালো তলোয়ারের মতো কাজ করেছে। তার প্রতিটি লেখনী ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তিনি বার বার শাসকদের কোপানলে পড়েছেন। নিক্ষিপ্ত হয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কিন্তু আদর্শচ্যুত হননি। মাথা নত করেননি অন্যায়ের কাছে।

 

কাজী নজরুল ইসলামের সাম্য ও মানবতাবাদ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দ্যোতনা সৃষ্টি করে। তাঁর আগে বাংলা কাব্যে এমন মানবতাবাদ ও সাম্যের বাণী আর কেউ শোনায়নি। তিনি যেন মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বাংলা সাহিত্য আকাশে উদিত হয়েছিলেন।

 

তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল, মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরাম স্কুলে। নিদারুণ দারিদ্র্য তাঁকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করতে দেয়নি। সিয়ারসোল রাজ স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নজরুল।

 

১৯২১ সালে মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার সাথেই তিনি প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। সেখানে পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সাথে, যার সঙ্গে তাঁর প্রথমে পরিণয় ও পরে বিয়ে হয়েছিল।  নজরুল চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেছেন। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলন চাঁপা, ছায়ানট ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা তাঁর উপন্যাস। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা ইত্যাদি তাঁর গল্পগ্রন্থ। তিনি সুগায়ক ছিলেন। ‘ধ্রুব’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। কমরেড মুজাফ্ধসঢ়;ফর আহমদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন তাঁর বন্ধু। নজরুল যেমন রবীন্দ্রনাথকে তাঁর বই উৎসর্গ করেছেন, তেমনি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ নাটক উৎসর্গ করেন নজরুলকে।

 

অভাব ছিল নজরুলের চিরসঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর সাহিত্যসাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অন্যতম প্রেরণা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে নিয়ে আসেন এবং তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। কবি’র মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। প্রেম, মানবতা ও সাম্যের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো এই মহান কবি যুগ যুগ ধরে বাঙালির মানসপটে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুদিনে রেডিও, টেলিভিশন, দৈনিক সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও প্রকাশ করবে।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট