চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

রাতের আঁধারে সওজের কোটি টাকার জমি দখল

‘দিন দিন কেরানীহাটে সরকারি জমি বেদখল হচ্ছে’

ইকবাল মুন্না, সাতকানিয়া

২৭ আগস্ট, ২০২৩ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

বাস মালিক সমিতির নাম দিয়ে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে রাতের অন্ধকারে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। দখল করা জমির বাজার মূল্য কোটি টাকারও বেশি। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সড়কের মিড ডিভাইডার (সড়ক বিভাজন) সরিয়ে মূল্যবান জায়গাটি দখল করা হয়।

 

বাস মালিক সমিতির সভাপতি জানান, সমিতির অফিস ঘর ও যাত্রীদের বসার সুবিধার্থে ঘরটি করা হচ্ছে। বান্দরবান সওজ কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি আমরা জানিনা। দেখে ব্যবস্থা নেব। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, অবৈধ দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করা সরকারি জায়গা ফের বেদখল হয়ে  যাচ্ছে।

 

গতকাল শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের সাতকানিয়ার কেরানীহাট বান্দরবান মোড়ে সড়কের পাশ ঘেঁষে পাকা পিলারের উপর সবুজ টিন দিয়ে প্রায় এক কাঠারও বেশি জমি দখল করে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার দিনেও জায়গাটি খোলা ছিল। যে জায়গাতে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে তার সামনে মিড ডিভাইডার ছিল। সেখানে সিএনজিচালিত ট্যাক্সি রাখা হতো। বৃহস্পতির সকাল থেকে ট্যাক্সিগুলো সরানো হয়। শুক্রবার সকালে উঠে দেখা যায় সড়কের পাশে সওজের জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

 

কেরানীহাটের একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী জানান, স্বাধীনতার পর কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক নির্মাণ করার সময় বান্দরবান সওজ নির্মাণ কাজের মালামাল রাখার কাজে জমিটি ব্যবহার করেছিল। দীর্ঘদিন জমিটি সীমানা প্রাচীর দেয়া ছিল। পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন অবৈধ দখলদাররা দখলে রেখেছিল। আনুমানিক ১২/১৩ বছর আগে বান্দরবান সওজ দখলমুক্ত করে বান্দরবানগামী বাস পার্কিং এবং সাধারণ মানুষের চলাফেলার সুবিধার্থে জমিটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যে জমিটি দখল করা হয়েছে সেটার বর্তমান বাজারমূল্য কোটি টাকার উপরে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম বাস কোস্টার  পূর্বাণী চেয়ার কোচ মালিক সমিতির  নাম দিয়ে সরকারি জমিটি দখল করা হয়েছে।

 

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সমিতির সভাপতি নেজাম উদ্দীন জানান, আমাদের যে মালিক সমিতির অফিস ছিল সেখানে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আপাতত সমিতির অফিস এবং যাত্রীদের বসার জন্য টিনশেড দিয়ে ঘরটি  তৈরি করা হয়েছে।

 

সওজের জমি দখল করে ঘর নির্মান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নেজাম উদ্দিনের দাবি, যেখানে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে আমার পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে।

 

কেরানীহাট প্রগতিশীল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম বলেন, দিন দিন কেরানীহাটে সরকরি জমি বেদখল হচ্ছে।   সরকারের যেসব জায়গা অবৈধ দখলে আছে তারা উদ্ধার করা জরুরি।    কেরানীহাট বায়তুশ শরফ মসজিদ মার্কেটের সামনে পুরো জায়গাটি বেদখল হয়ে গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সরকারি জায়গা দখল করে দোকানপাট তৈরি করা হচ্ছে, এসব দোকান অফেরতযোগ্য সালামি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারহান বলেন, বান্দরবান-সাতকানিয়া সড়ক উন্নয়ন কাজের কারণে সড়কটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা আমাদের এখনো বুঝিয়ে  দেয়নি। তবে সড়ক বিভাগের জায়গা দখল করে কেউ নির্মাণ কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিয়ষটি আমি দেখব।

 

কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান আলী বলেন, শুনেছি কেরানিহাটে বাস সমিতির একটি অফিস হচ্ছে সড়কের জায়গার উপর। যেখানে ঘরটি তৈরি করা হচ্ছে সেটি অবৈধ দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সমিতির নাম দিয়ে তারা যদি এই জায়গাগুলো আবার কেউ দখল করে তা দুঃখজনক।

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট