গত আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে সরকারি সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। বোরো সংগ্রহ নিয়েও সংশয় ছিল। কারণ চট্টগ্রামে খরায় পুড়েছিল বোরো আবাদ। তারপরও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে লক্ষ্যমাত্রার ৩২ শতাংশ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৬ শতাংশ। খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, বোরো মৌসুমে পাঁচ হাজার ৩৫ টন ধান ও ৮০৬ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিকেজি ধান ৩০ টাকা ও মিলারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি চাল ৪৪ টাকা দরে কিনবে সরকার। সীতাকু-, ফটিকছড়ি ও পটিয়ার মিলারদের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অন্যান্য উপজেলায় সিদ্ধ চালের মিল না থাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ধানও বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে কেনার সিদ্ধান্ত হয়।
খাদ্য কর্মকর্তারা গতকাল জানান, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ধান সংগ্রহ করা হয় ১৬৪৬ মেট্রিক টন ৬শ কেজি। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার মধ্যে মিরসরাই থেকে দুই টন ১৬০ কেজি, ফটিকছড়িতে ২৬৬ টন ৬৮০ কেজি, হাটহাজারীর কাটিরহাট এলএসডিতে ২৬৪ টন ৯৬০ কেজি ও হাটহাজারী এলএসডিতে ১৭ টন ৩৬০ কেজি, রাউজানে ৬৪ টন, রাঙ্গুনিয়ায় ৩০০ টন ৪৮০ কেজি, বোয়ালখালীতে ৭৭ টন, সাতকানিয়ায় ২৫ টন ২৮০ কেজি, বাঁশখালীতে ৬৬ টন ৬০০ কেজি এবং আনোয়ারায় ৩৬১ টন ৮০ কেজি ধান সংগ্রহ করা হয়।
অপরদিকে, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪৯ টন ৬৬০ কেজি। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।
খাদ্য কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম হচ্ছে আতপ চাল অধ্যুষিত অঞ্চল। তবে বোরো মৌসুমে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত দেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়। তাই চাল সংগ্রহ কম হয়েছে।
দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। গুদামে ‘বকশিস’ না দিলে ধানে চিটা বেশি বলে ফেরত দেওয়া হয়। এতে ধান আনা-নেওয়ায় পরিবহণ ও শ্রমিক খরচ বেশি গুনতে হয়। ফলে লাভের চেয়ে উল্টো লোকসানে পড়েন তারা। তাই ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ধান বিক্রিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন চাষিরা। বোয়ালখালীর আমুচিয়া গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, সরকারি খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রিতে গুদাম কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অনেক সময় ধান নিয়ে ফেরত আসতে হয়। লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হয়। আর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পাড়া-গাঁ থেকে আরও বেশি দামে কিনে নেয়। তাহলে কোন দুঃখে চাষিরা খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রি করবে?
একই কথা বললেন কড়লডেঙ্গা এলাকার কৃষক সাবেক মেম্বার কুমকুম দাশ। তিনি বলেন, ধানের উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি। সেই তুলনায় সরকারি দর অনেক কম। তাই চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে খরা, ব্লাস্ট ও লবণাক্ততার কারণে বোরো ধানের বড় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণের পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশে বোরো ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। এসব কারণে চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ে ছিলেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
পূর্বকোণ/এসি