দীর্ঘ সময় লোকসানে ডুবে থাকা বিআরটিসি এখন লাভের মুখ দেখছে। বিআরটিসির চট্টগ্রাম ট্রাক ডিপো থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা লাভ করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। অর্থবছরের মাঝামাঝিতে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধির মধ্যেও লাভের এই পরিমাণকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে দেখছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন- চলতি অর্থবছরে জ্বালানি তেলের দাম আর না বাড়লে লাভের নতুন রেকর্ড করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম ট্রাক ডিপোর হিসাব অনুযায়ী- ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। লাভ হয়েছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয় ৮২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। লাভ হয় ১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আয় হয়। অর্থাৎ ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ মাত্র তিন অর্থবছরের ব্যবধানে ট্রাক ডিপো থেকে দ্বিগুণ আয় হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বিআরটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের উদ্ভাবনী কার্যক্রম, নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চুক্তি, সঠিক মাইলেজ নির্ধারণে প্রতিটি ট্রাকে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন, চালক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ে। রাজস্ব আয় বাড়ায় জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধির মধ্যেও লাভের মুখ দেখেছে সংস্থাটি।
সূত্র জানায়- ২০২০-২১ অর্থবছরেও কেবল খাদ্য অধিদপ্তর এবং কেপিএম’র সঙ্গে পণ্য পরিবহন চুক্তি ছিলো চট্টগ্রাম ট্রাক ডিপোর। মো. তাজুল ইসলাম বিআরটিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর তার নির্দেশনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ বাড়ানো হয়। এখন আগের ২ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কাফকো, ড্যাপ, টিএসপি, চিনি শিল্প, সেনাবাহিনী, বিটিভি, টিসিবি, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চুক্তি করা হয়েছে।
এছাড়া অবস্থান ও সঠিক মাইলেজ নির্ধারণে ট্রাকে ভিটিএস প্রযুক্তি সংযোজন, এপিএএমএম সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বচ্ছ হিসাব সংরক্ষণ, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার, সময় বাঁচাতে ব্রিজে ‘ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন’ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, প্রতি মাসের ১ তারিখ চালক-কর্মচারীদের বেতন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতাসহ নানা খাতে প্রণোদনা দিয়ে কাজে উদ্দীপনা বৃদ্ধি বিপুল রাজস্ব আয়ে ভূমিকা রেখেছে।
বিআরটিসির চট্টগ্রাম ট্রাক ডিপোর ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান স্যার দায়িত্ব নেয়ার পরপরেই আমাদের ২১টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তার এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করায় এখন চট্টগ্রাম ট্রাক ডিপো বিআরটিসির মডেল ডিপোতে পরিণত হয়েছে। রাজস্ব আয় বেড়েছে। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধির মধ্যেও ভালো লাভ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ২৮০টি ট্রাক দিয়ে শুধু পণ্য পরিবহন নয়-বিআরটিসি নিয়ে মানুষের ভাবনা পাল্টাতে চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে আমরা দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক নির্মাণ করেছি। ডিপোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চালক-কর্মচারীদের কেউ মারা গেলে দাফন বাবদ ৩০ হাজার এবং এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কাজে।
পূর্বকোণ/আরডি