কর্ণফুলী নদীসহ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নদ-নদীর অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাওয়া তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ তালিকা যাচাই-বাছাই ও জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ২৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গত বছরের শেষ দিকে কর্ণফুলী নদীর উপর সমীক্ষা পরিচালনা করে। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী চট্টগ্রামের ৭ উপজেলা ও রাঙামাটির দুই উপজেলায় সমীক্ষা চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা চিহিৃত করে সরকারি এ সংস্থাটি। নদীর উভয় তীরে দুই হাজার ৪৯২টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে নদী কমিশন। এর আগে ২০১৫ সালে হাইকোর্টের আদেশে কর্ণফুলীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনার তালিকা করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তাতে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছিল।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের (বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি) বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের দখলদারের তালিকা প্রকাশ করে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী ও বিভিন্ন উপজেলার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন সার্কেলের ভূমি কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাকলিয়া, পতেঙ্গা ও সদর সার্কেলের তালিকায় দুই হাজার ১১২ জন অবৈধ দখলদারের নাম প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও বাকলিয়া মৌজায় আরও ৭২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে মাদারবাড়ি, মনোহরখালী ও ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দখলদারের তালিকায় সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নামও রয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর দখলদারের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫ সালে করা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।
২০১০ সালে কর্ণফুলী নদীর সীমানা নির্ধারণ, দখলদার চিহ্নিত ও উচ্ছেদ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে মানবাধিকার-পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জনস্বার্থে এ রিট দাখিল করেছিলেন। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে কর্ণফুলীর দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহিৃত করেছিল জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে মাঝিরঘাট ও লালদিয়ার চর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এরপর উচ্ছেদ অভিযান আর গতি পায়নি। অধিকন্তু আট বছরের কর্ণফুলীর দখলদার আরও বেড়েছে।
বাকলিয়া মৌজার রাজাখালী খালের ৫৩ দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় মাদ্রাসা ও মসজিদও রয়েছে। এছাড়াও আরও দুই মৌজায় পৃথকভাবে আরও ১৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।
চাক্তাই খাল দখলে ৫৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। অবৈধ দখলদারদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। বিভিন্ন দোকান ও গুদাম গড়ে তুলেছেন চাক্তাই খাল দখল করে।
উপজেলা ভিত্তিক অবৈধ দখলদার:
কর্ণফুলী নদী ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সীতাকুণ্ড ২০১৯ সালের তালিকায় ৭ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। রাঙ্গুনীয়া উপজেলায় ৭৮ জন দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। লোহাগাড়া উপজেলায় হাঙ্গর ও ডলু খালের অবৈধ দখলদার ১৬ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। কর্ণফুলী উপজেলায় ৫৩ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাঁশখালী উপজেলার চাম্বলবাজার এলাকায় খালের অবৈধ দখলদারের ২৪ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। পটিয়ার কোলাগাঁও এলাকা জলাধার ভরাট করে নয় ব্যক্তি অবৈধ দোকান নির্মাণ করা হয়েছে বলে বলা হয়েছে। পটিয়ার চাঁনখালী খালের ইন্দ্রপুল এলাকায় আটজনের নাম প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে পৌরসভার নালা ও কসাইখানা এবং একাধিক লবণ মিলের নাম রয়েছে। আল্লাই এলাকায় ১০ অবৈধ দখলদারের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে লবণ শিল্পের গোডাউন। মিরসরাইয়ে বিভিন্ন খাল দখলে ২৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। রাউজানে বিভিন্ন খাল দখলে ১০ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। হাটহাজারীতে ১৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।
রাঙামাটি:
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে তালিকা প্রণয়ন করে। সেই তালিকায় দেখা যায়, রাঙামাটি সদরে ২২ জন অবৈধ দখলদার রয়েছে। কাপ্তাই উপজেলায় আটজন ও রাজস্থলীতে ২১ জন দখলদারের নাম রয়েছে।
খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলায় চেঙ্গী নদী দখল করেছে ১৪ জন। পানছড়িতে রয়েছে ৬ জন। ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো জেলা প্রশাসকের চিঠিতে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছাড়া আট উপজেলায় নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধারভিত্তিক কোনো অবৈধ দখলদার নেই। খাগড়াছড়ি খালের ৬ জন অবৈধ দখলদার রয়েছে।
বান্দরবান:
বান্দরবানের সাঙ্গু নদী দখলে ২৮৫ জন দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নদীর ২৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ জায়গা দখল করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/এএইচ