উদীয়মান বাজারের কারণে বৈশ্বিক সম্পদের পরিমাণ ২০২৭ সালের মধ্যে ৩৮ শতাংশ বাড়বে। ২০২৩ সাল থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক সম্পদ ৬২৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। সম্প্রতি ১৪তম বার্ষিক বৈশ্বিক সম্পদ প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএস।
প্রতিবেদনে ২০২২ সালে বৈশ্বিক গৃহস্থালি সম্পদের রেকর্ড পতন উঠে এসেছে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মহামন্দার পর প্রথমবারের মতো নিচে নেমেছে গৃহস্থালি সম্পদের সূচক। বেসরকারি সম্পদ গত বছরে কমেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে সংকুচিত হয়েছে বেশি। অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সম্পদ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাশিয়া, মেক্সিকো, ভারত ও ব্রাজিলে। প্রতিবেদন অনুসারে, উদীয়মান বাজার হিসেবে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো অর্থাৎ ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি ২০২৭ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বাড়বে।
আগামী দিনগুলোয় বৈশ্বিক সম্পদের বৈষম্য কমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বিশেষ করে উদীয়মান বাজারগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে আমানত, বন্ড ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে গঠিত পুঁজির মতো আর্থিক সম্পদের ওপর। বিপরীতে আবাসন খাতের মতো অ-আর্থিক সম্পদ ছিল যথেষ্ট স্থিতিশীল। গত বছরে প্রাপ্ত বয়স্কের গড় সম্পদের পরিমাণও কমেছে বলে দেখা যাচ্ছে প্রতিবেদনে। তবে বৈশ্বিক মাঝারি সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ শতাশ।
২০২২ সালে বৈশ্বিক নিট বেসরকারি সম্পদ ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৪৫৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। গড়ে মাথাপিছু প্রাপ্ত বয়স্কের সম্পদ কমেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ পতনের পেছনে প্রধান অনুঘটক হিসেবে ছিল অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের অবস্থান। আঞ্চলিক হিসেবে সম্পদশালী দেশগুলো বেশি সম্পদ হারিয়েছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ যৌথভাবে সম্পদ হারিয়েছে ১০ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। প্রশান্ত মহাসাগরী অঞ্চল সম্পদ হারিয়েছে ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে লাতিন আমেরিকার সম্পদ বেড়েছে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী ছিল, যা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে।
সম্পদ হারানোর দিক থেকে সামনের কাতারে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। বিপরীতে সম্পদ বৃদ্ধির তালিকায় সামনে রয়েছে রাশিয়া। ভারতও উল্লেখযোগ্য এগিয়েছে উদীয়মান বাজার হিসেবে। তবে প্রাপ্ত বয়স্কের সম্পদ বিবেচনায় সুইজারল্যান্ড রয়েছে সবার সামনে। পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্ক।
জনসংখ্যার দিক থেকে বিবেচনায় নিলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নন-হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর সম্পদ ২০২২ সালে কমেছে। একই সময়ে আফ্রিকান-আমেরিকানদের পরিস্থিতি অনেকটা আগের মতোই। তবে হিস্পানিকদের সম্পদ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০২২ সালে সার্বিকভাবে সম্পদের বৈষম্য কমেছে। আগামী দিনগুলোয় যা আরো কমবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫ কোটি ৯৪ লাখে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী দিনগুলোয় উদীয়মান বাজারগুলো বৈশ্বিক সম্পদ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রাপ্ত বয়স্কের গড় সম্পদ ১ লাখ ১০ হাজার ৭০ ডলারে পৌঁছবে। মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা পৌঁছবে ৪ কোটি ৬০ লাখে। ইউবিএসের বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান ইকবাল খান দাবি করেছেন, চলতি বছরের বৈশ্বিক সম্পদ প্রতিবেদন সমাজ ও অর্থনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করেছে। পাশাপাশি তুলে ধরেছে সম্পদের প্রবাহ ও সম্ভাব্য উন্নয়নকে। অন্যদিকে, ক্রেডিট সুইসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ন্যানেট হেচলার বলেছেন, ‘সম্পদের এ মূল্যায়ন মহামারী-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপথ তুলে ধরে। যদিও মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২০২২ সালজুড়েই। সৌজন্য: বণিক বার্তা
পূর্বকোণ/সাফা