দুই যুগ ধরে নগরীতে ছিনতাই করছে শেখ ফরিদ। মাঝখানে এক বছরের জন্য ছিলেন দুবাই। পরে দেশে ফিরে ফের জড়িয়ে পড়ে ছিনতাইয়ে। এরমধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছে তিনবার। খুলশীতে বিদেশি নাগরিকের ব্যাগ ও ক্যামেরা ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল শেখ ফরিদকে। পায়ে গুলির ক্ষত নিয়ে টানা পাঁচ বছর কারাভোগ করে। পাঁচ মাস আগে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে ফের ছিনতাই করতে গিয়ে ফরিদ ধরা পড়ে খুলশী থানা পুলিশের হাতে। ফরিদের মত অন্তত আরো এক ডজন ছিনতাইকারীর পেছনে প্রায় দুই যুগ ধরে ছুটছে নগর পুলিশ। ছিনতাইকারী গ্রুপের নেতাদের খুব একটা ধরা পড়তে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে ধরা পড়লেও দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে বের হয়ে জড়িয়ে পড়ে ফের ছিনতাইয়ে।
গত ৭ আগস্ট রাত পৌনে এগারোটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একজন মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক টিউশনি শেষ করে খুলশী থেকে পাঁচলাইশের বাসায় যাচ্ছিলেন। তাকে বহনকারী রিকশা দুই নম্বর গেট এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে আসা একটি সিএনজিতে এক ব্যক্তি চিকিৎসকের ভ্যানিটি ব্যাগটি টান মেরে নিয়ে যায়। ব্যাগে ৩০ হাজার টাকা ও একটি আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স সিরিজের মোবাইল সেট ছিল।
ওই ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে শেখ ফরিদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকলিয়া এক্সেস রোডের লেদু মেম্বারের কলোনির বাসা থেকে আইফোনটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শেখ ফরিদ জানান, ২০১৮ সালে খুলশীতে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ বছর কারাভোগ করে। পাঁচ মাস আগে জামিনে বের হয়।
ইন্টার্ন চিকিৎসকের ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করার কথা স্বীকার করে ফরিদ জানান, বদলি চালক হিসাবে সিএনজি ট্যাক্সিটি তিনিই চালিয়েছেন। ট্যাক্সিতে ইব্রাহিম ও সজীব নামে আরো দুইজন ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধেও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। ছিনতাই করা ফোনটি ২২ হাজার টাকা দাম ধরে কিনে নিয়েছিল ফরিদ। ফরিদ জোরারগঞ্জ থানার পূর্ব সাহেবপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে।
ফরিদ জানান, ২০০৮ সাল থেকে তিনি ছিনতাইয়ে জড়িত। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর দুবাই গিয়েছিল। সেখানে দেখেন পরিশ্রমের তুলনায় টাকা কম। ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আবারও ছিনতাই শুরু করে। ফরিদ বলেন, তার মতো অন্তত এক ডজন ছিনতাইকারী দলের নেতা রয়েছে যারা দুই যুগের বেশী সময় ধরে নগরীতে ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরমধ্যে অন্যতম হলো, সেলিম, আবু তাহের, ভুট্টো, ইমাম হোসেন (কারাগারে), ইউসুফ (কারাগারে), নসু, দীলিপ, জসিম ওরফে গারুলি জসিম, বরিশালের কালাম (কারাগারে), আলাউদ্দিন (কারাগারে), মোক্তার হোসেন ও শাহজাহান।
খুলশী থানার পরিদর্শক (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ছিনতাই করতে গিয়ে ২০১৮ সালে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আহত হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল ফরিদ। পাঁচ বছর কারাভোগ করার পর পাঁচ মাস আগে জামিনে বের হয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। দুই নম্বর গেটের ছিনতাইয়ে ঘটনায় ফরিদ ট্যাক্সি চালিয়েছিল। তার সাথে আরো দুইজন ছিল। তাদের নাম ঠিকানা আমরা পেয়েছি।
প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নগরীতে। হাতে গোনা দু’একটি ছাড়া অধিকাংশ থানার ওসিরা ছিনতাইয়ের মামলা নিতে আগ্রহী নন। ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় গেলে তা ধামা চাপা দিয়ে হারানোর কথা বলে সাধারণ ডায়েরি নিয়ে দায় সারছে পুলিশ। যার কারণে ছিনতাইয়ের শিকার হলেও সাধারণ লোকজন থানায় যেতে তেমন আগ্রহী নন।
২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে নগরীর জাকির হোসেন রোডে এমইএস কলেজের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির রাইটিং সেন্টারের পরিচালক জুরিয়া ডেভিস। বাবার সাথে রিকশায় করে দক্ষিণ খুলশীর দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ ও একটি ক্যানন ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় শেখ ফরিদ। ওই ঘটনায় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে আহত হয় ফরিদ। ডান পায়ে একাধিক গুলির ক্ষত চিহ্ন নিয়ে পাঁচ বছর পর কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে ফের সিএনজি চালকের ছদ্মবেশে ছিনতাই শুরু করে।
পূর্বকোণ/পিআর