মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম শাখায় করোনা পরবর্তী সময়ে কমে গেছে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা। অধিদপ্তরের হিসেবেই এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার তথ্য মিলেছে। ইতিপূর্বে প্রশিক্ষণার্থীদের সবাইকে ভাতা প্রদান করা হলেও বর্তমান সেশন থেকে ভাতা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা অধিদপ্তর সূত্রের। বর্তমানে অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি বিভাগে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
জানা যায়, সংস্থাটি গরিব-অসহায় নারীদের পাঁচটি বিষয়ের (আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান, শোপিস তৈরি, বিউটিফিকেশন, ব্লক বাটিক এন্ড প্রিন্টিং, মোবাইল রিপেয়ারিং) উপর তিন মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়। এভাবে বছরে চারটি সেশন চলে। তিন মাস মেয়াদের প্রতিটি কোর্সে ২০ জন করে ১০০ জন নারী প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়। করোনার আগে এক বছরে চার সেশনে ৪০০ জন নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সংস্থাটি থেকে বের হয়। কিন্তু করোনা পরবর্তী গত দুই বছরে প্রশিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে বছরে ২০০ জন নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বের হচ্ছে। চলতি বছর এ সংখ্যা আরো কমতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের শেষ সেশন থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রশিক্ষণ ভাতা বন্ধ রেখেছে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ কারণে প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছে নারীরা। পাঁচটি কোর্সের মধ্যে নারীদের আগ্রহ বেশি দেখা যায় আধুনিক দর্জি বিজ্ঞানে। পছন্দের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, বিউটিফিকেশন, তৃতীয় অবস্থানে শোপিস তৈরি এবং ব্লক বাটিক এন্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ। তুলনামূলক আগ্রহ কম মোবাইল রিপেয়ারিংয়ে।
চলমান প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়েছেন প্রিয়াংকা চৌধুরী, জিএসমিন আক্তার, কবিতা বড়ুয়া ও নুর বেগম। তাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তারা কেউ সেলাই কাজ শিখছেন, কেউ বিউটিফিকেশন, শোপিস তৈরি এবং ব্লক বাটিক এন্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ শিখছেন।
জিএসমিন আক্তার বলেন, আমি সেলাইয়ের কাজ শিখছি। আমার পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। স্বামী-শ্বশুর বাড়ির মানুষ নির্যাতন করতো, পরে ডিডোর্স দিয়ে দেয়। ভাইদের কাছে থাকছি। তাই নিজে কিছু করার ইচ্ছে থেকে এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসি। প্রশিক্ষণ শেষে যদি একটি সেলাই মেশিন পাই তাহলে স্বাবলম্বী হতে পারবো।
নগরীর গোসাইলডাঙ্গার বাসিন্দা প্রিয়াংকা চৌধুরীর স্বামী মারা গেছেন। তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। নিজে কিছু করার ইচ্ছায় এতোদূর থেকে এখানে এসে কাজ শিখছেন। ভাতা না পেলেও কাজ শিখতে আগ্রহী।
হতদরিদ্র পরিবারের কবিতা বড়ুয়া নিজের আগ্রহে কাজ শিখতে আসেন। ঘরে অসুস্থ স্বামী এবং তিন সন্তান রয়েছে। সংসারের হাল ৪০ বছরের কবিতাকেই ধরতে হয়েছে। সে জন্যই ব্লক-বাটিকের কাজ শিখতে আসেন তিনি। তিনি বলেন, কাজটি শিখতে পারলে আমার আয়ের পথ আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই শিখতে এসেছি। ভাতা না দিলেও কাজটি মনোযোগ দিয়ে শিখতে চাই।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া বলেন, আগে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা দিতাম। মন্ত্রণালয়ের আদেশে এটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। যে কারণে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা কমছে। এখন যারা আগ্রহী তাদের জানিয়ে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ ভাতা পাওয়া যাবে না। ভাতা ছাড়া যদি কেউ শিখতে আগ্রহী হয়, তবেই ভর্তি হতে পারছে। মন্ত্রণালয় আবার চালু করলে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা দেয়া হবে।
পূর্বকোণ/পিআর