প্রতি মাসেই শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ঈপ্সিত গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে অভিবাসীদের মর্মান্তিক মৃত্যুও নাড়া দিতে পারছে না পশ্চিমা বিবেককে।
উল্টো দেশগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসন আইন কঠোর এবং সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়ে দিচ্ছে। উপকূল থেকে নারী-শিশুসহ অভিবাসীদের মাঝ সমুদ্রে ঠেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর অমানবিক আচরণ তীব্র হচ্ছে। তারা মানবিকতার পরিবর্তে নিজস্ব স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
চলতি বছরের এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২৩ সালে মৃত্যুর সংখ্যা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন পর্যন্ত চলতি বছর অন্তত ১ হাজার ৯৯৯ অভিবাসী মারা গেছেন। তাদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। গত বছরের একই সময়ে মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৩৫৮ জন। ভূমধ্যসাগরজুড়ে তিনটি প্রধান রুট এবং পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক রুটে মৃত্যু হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত।
সর্বশেষ ভূমধ্যসাগরের ইতালি উপকূলে নৌকা ডুবে নারী ও শিশুসহ ৪১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ইতালির কোস্টগার্ডের জাহাজ তাদের মধ্যে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের নিয়ে দেশটির উপকূলীয় শহর ল্যাম্পাডুসায় পৌঁছায়। জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভ্যালের ইউরোপীয় সংবাদদাতা বার্ন্ড রিগার্ট বলেন, অভিবাসীদের ঠেকাতে কঠোর থেকে কঠোরতর পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউরোপ।
আইওএম জানিয়েছে, ইউরোপ ও আমেরিকার গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে ২০১৪ সাল থেকে হয় প্রাণ হারিয়েছে, নয়তো নিখোঁজ হয়ে গেছে প্রায় ৫০ হাজার অভিবাসী। সংস্থাটি মনে করে, মৃত ও নিখোঁজ মানুষের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত। মোট শরণার্থীর ৭৬ শতাংশকেই আশ্রয় দিয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো। আবার প্রায় ৭০ শতাংশ উদ্বাস্তু তাদের মূল দেশের প্রতিবেশী দেশগুলোয় বাস করে।
বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন বাড়িয়ে দিচ্ছে। অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু বাড়ার আরেকটি বড় কারণ হলো এখন আরও বেশি মানুষ ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা অভিবাসীর সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় বেশি। বিশেষ করে ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ ইউরোপের দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। যেখানে গত বছরের এই সময়ে সংখ্যাটি ২৭ হাজারেরও কম ছিল। আইওএমের অনুমান, ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপে সমুদ্রপথে অভিবাসীদের মোট আগমন এখন পর্যন্ত ৮২ হাজারেরও বেশি। গত বছরের এই সময়ে যা ৪৯ হাজার ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসন বিশেষজ্ঞ রেভা ধিংরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু বাড়ার প্রধান কারণ হলো সংশ্লিষ্ট দেশ ও সাহায্যকারী গোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতায় ধীরগতি এবং অসহযোগিতা। গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে গ্রিক উপকূলরক্ষীদের দ্বারা অভিবাসীদের পুশব্যাকের চিত্র উঠে আসে। সৌজন্য: সমকাল
পূর্বকোণ/সাফা