কৃষ্ণ খাল এবং কুয়াইশ খাল দিয়ে নিষ্কাশন হয় পশ্চিম মোহরা, ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়ন, ওয়াজেদিয়া, ভুলিয়া পাড়া, পশ্চিম কুয়াইশ, পশ্চিম বাথুয়া, বৃহত্তর লালা চন্দ্রবিল, অনন্যা আবাসিক এলাকা, বানিয়াপাড়াসহ বিশাল এলাকার পানি। কিন্তু খাল দুইটি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান সিডিএ’র মেগা প্রকল্পে নেই। অপরদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও গত চার বছরে এখানে হাত দেয়নি। খাল দু’টি ভরাট হয়ে এখন আর পানি নিষ্কাশন হয় না বললেই চলে। তাই পশ্চিম মোহরার পানি সরছে না। এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে এই যন্ত্রণায় ভুগছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
খোরশেদ আলমদার নামে পশ্চিম মোহরার এক বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি এবং ভিডিওসহ পোস্ট দিয়ে বলেছেন, “এই এলাকারসমগ্র পানি ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণ খাল এবং কুয়াইশ খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খালে সরকারের কোন দৃষ্টি না থাকার কারণে এই খালটি দুই মাইল এলাকাজুড়ে পলি এসে ভরাট হয়ে গেছে। তার মাঝে যোগ হয়েছে মানুষের নিক্ষিপ্ত ডাস্টবিনের ময়লা। কোথাও কোথাও খাল দখল হয়েছে। কোথাও কোথাও খালটা সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। নিক্ষিপ্ত ময়লার উপর বিভিন্ন ধরনের গাছ লতা পাতা ঘাস উঠে এটা যে খাল তা চিহ্নিত করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। গোলাপের দোকান ব্রিজ এবং কুয়াইশ ব্রিজের নিচে একাধিক সেবা প্রতিষ্ঠানের পাইপ যাওয়ার কারণে ময়লা আবর্জনা লেগে পানি নিষ্কাশন এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে। এই বিশাল এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়ে হালদা নদীতে পড়ার একমাত্র প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে আছে। এই চরম দুর্ভোগ বৃষ্টির কারণে নয়।” তিনি তার পোস্টে এই সমস্যাকে দায়ী করেন অব্যবস্থাপনাকে।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি এই খাল দিয়ে নৌকা চলেছে। গোলাপের দোকান এলাকায় নৌকায় বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি হত। বিভিন্ন সময় খালে মাছ ধরার উৎসব হতো। সময়ের ব্যবধানে এখন সবকিছু স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাই কৃষ্ণ খালকে সংস্কার না করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা কখনোই সম্ভব নয়। তাই এই ঐতিহ্যবাহী খালের খনন করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার জোর দাবি জানান তিনি।
চসিক সূত্র জানায়, খোরশেদ আলম সুজন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক থাকাকালে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে কৃষ্ণ খালের কিছু অংশ একবার পরিষ্কার করেন। এরপর খালটি গুরুত্ব দিয়ে আর পরিষ্কার করা হয়নি।
মোহরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মোহাম্মদ নুরুল আমিন মামুন পূর্বকোণকে বলেন, কৃষ্ণখাল এবং কুয়াইশ খাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাল। সেনাবাহিনী একবার পরিষ্কার করে দিয়েছিল। এরপর তিনি যতটুকু সম্ভব এসকেভেটর দিয়ে কাজ করেছেন। উপরে কচুরিপানা থাকলেও পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। তবে ব্রিজের গোড়ায় বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপের সাথে আবর্জনা আটকে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই নিজের মত করে খালের উপর কালভার্ট নির্মাণ করেছে। যার কারণেও পানি নামতে বাধা পাচ্ছে। এই খাল নিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে গতকাল তিনি জরুরি বৈঠক করার কথা উল্লেখ করে বলেন, দ্রুত খাল পরিষ্কার করার জন্য মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, শুরুর দিকে কৃষ্ণ ও কুয়াইশ খাল সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অজানা কারণে বাদ পড়েছে।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে তার প্রকল্প পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লে. কর্নেল শাহ আলী পূর্বকোণকে বলেন, কৃষ্ণ খাল এবং কুয়াইশ খাল সিডিএ’র চলমান মেগা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এই খাল দুইটিতে তারা কোন কাজ করছেন না। তবে ২০১৯ সালে একবার তারা খাল দুইটি পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। মূলত প্রকল্পের বাইরে তারা কাজটি করেছিলেন। খাল দুইটির খনন কাজ করবে সিটি কর্পোরেশন।
পূর্বকোণ/পিআর