চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সীতাকুণ্ডে টানাবর্ষণ : ঝুঁকিসত্ত্বেও তারা ফের পাহাড়ে

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

৮ আগস্ট, ২০২৩ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এতে একদিকে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে সবজি চাষে। অন্যদিকে, মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে পাহাড় চূড়ায় বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবারের। তবে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং করেছে প্রশাসন। শতাধিক পরিবারকে পাহাড় থেকে নামিয়েও আনা হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি সত্বেও তারা ফিরে গেছে পাহাড়ে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪-৫ দিন ধরে সীতাকুণ্ডে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে উপজেলার সৈয়দপুর থেকে সলিমপুর পর্যন্ত সর্বত্র জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

 

সরেজমিনে পৌরসদর, উপজেলার মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় চতুর্দিক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য বাড়ি ঘর, হাজার হাজার একর সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় বহু বাড়ি ঘরে রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিতে যেকোন সময় ভূমিধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে মাইকিংসহ বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

 

সরেজমিনে গতকাল (সোমবার) উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে টানা বৃষ্টির নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার প্রায় সর্বত্রই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নানামুখী দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার জঙ্গল ভাটিয়ারী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে অবস্থান করা ৫০টি পরিবার। প্রবল পাহাড়ি ঢলের পানি তাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় তাদের রান্না বন্ধ হওয়াসহ সেখানে থাকাও কঠিন হয়ে গেছে।

 

সোমবার (গতকাল) সেখানে গিয়ে প্রকল্পের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন, এসি ল্যান্ড মো. আশরাফুল আলম, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নাজিম উদ্দিনসহ জনপ্রতিনিধিরা। পরে প্রত্যেক পরিবারকে সরকারিভাবে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়। এছাড়া তারা পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিতে জঙ্গল সলিমপুর পরিদর্শন করেন। সেখানে শতাধিক পরিবারকে পাহাড় থেকে নামিয়ে স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় দিলেও পরবর্তীতে গোপনে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে ফিরে গেছেন পরিবারগুলোর সদস্যরা।

 

ভাটিয়ারীর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নাজিম উদ্দিন বলেন, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তার ইউনিয়নের অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু পরিবার এখনো পানিবন্দী। তবে জঙ্গল ভাটিয়ারীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্ধশত পরিবারে পানির সাথে পাহাড়ি ঢলের স্রোত অনেক ক্ষতি করেছে। তারা সেখানে রান্না করতে পারছিলেন না। ঘরে থাকাও কঠিন হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় সরেজমিনে এসে তাদের দুর্দশা দেখে সবাইকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে পুরো উপজেলায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আমরা এখনো ইউনিয়ন ভিত্তিক ক্ষতির তালিকা পাইনি। চেয়ারম্যানদের বলেছি। তারা এখনো পাঠাননি। আমরা ভাটিয়ারীতে ৫০টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যার আরো খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছেন। যাদের প্রয়োজন তাদেরকে দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। আমরা বেশি উদ্বিগ্ন জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো নিয়ে। তারাসহ প্রত্যেক ইউনিয়নের পাহাড়িদের সমতলে নেমে আসতে আগেও মাইকিং করেছি এবং জঙ্গল সলিমপুর পাহাড় থেকে শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে সমতলে স্কুলে এনে আশ্রয় দেয়া হলেও তারা গোপনে গোপনে আবারো পাহাড়ে ফিরে গেছে। তবুও আমরা আবারো ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেভাবে সাড়া পাচ্ছি না।

 

এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবীব উল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় উপজেলার প্রচুর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। দুয়েকদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতির আশংকা কম। আর পানি না কমলে অবশ্যই কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট