চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রাঙামাটির বিভিন্নস্থানে মাটি ধস, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

রাঙামাটি প্রতিনিধি

৮ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

অব্যাহত ভারী বর্ষণে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্নস্থানে মাটি ধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও সড়কে পাহাড় ধসে স্বাভাবিক যান চলাচলে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

 

একইসাথে কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়েছে শত শত লোকজন। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে লোকজন চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তার উপর মাটি ধসে পরে এবং গাছ উপড়ে পরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অবশ্য প্রশাসনের তদারকিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব মাটি ও গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।

 

এদিকে, অব্যাহত টানা বর্ষণের ফলে রাঙামাটির দশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাঙামাটিতে সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আর ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এইসব উপজেলার অন্যান্য এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয়রা। এসব উপজেলাগুতে জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রিতদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

 

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার বলেন, বাঘাইছড়িতে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলার কাঁচালং নদীর পানি বেড়ে এরই মধ্যে নিচু অঞ্চল সমূহ প্লাবিত হতে শুরু করেছে। উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করেঙ্গাতলী সড়ক ও পৌর এলাকার উগলছড়ি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের উগলছড়ি, বেপারী পাড়া, নিউলাইল্ল্যা ঘোনা এবং পৌরসভার বটতলী, মাদ্রাসা পাড়া, হাজী পাড়ার কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

তিনি আরও জানান, ভারী বর্ষণের ফলে মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কে দুইটিলা এলাকায় দুইবার পাহাড় ধসের ঘটনায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক জনপদ বিভাগ প্রায়  ২ ঘণ্টার চেষ্টায় যান চলাচল স্বাভাবিক করে তোলে। বন্যার আশংকায় উপজেলা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আনসার ভিডিপির সদস্যদের উদ্ধার কাজে মাঠে রাখা হয়েছে।

 

এদিকে, বিলাইছড়ি থেকে সংবাদদাতা সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, টানা ৮দিন অতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফারুয়া বাজার  প্লাবিত হয়েছে।

 

গতকাল সোমবার দুপুরে ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এগুজ্যা ছড়ি, তাড়াছড়ি, গোয়াইন ছড়ি, তক্তানালা উলুছড়ি এবং চাইন্দ্যা পাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

 

একইভাবে মুঠোফোনে তক্তানালার কার্বারি ভরত চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা জানান,তাদের এলাকায় ধান্যজমি একেবারে ঢলে তলিয়ে গেছে,ভেসে গেছে গবাদি পশু, ডুবে গেছে  দোকান,ব্যাপক  ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ক্ষেত, বাগান সহ অন্যান্য ঘরবাড়ি।

 

এছাড়াও ক্ষতি হয়েছে বিলাইছড়ি ইউনিয়নে ৮ ও  ৯ নং ওয়ার্ড। পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে বাড়িতে। মাটি ধসে পড়েছে সদরে ৩ নং কুতুবদিয়া ওয়ার্ডেও। ধসে পড়েছে শালবন এলাকায় ঘর-বাড়ি, উপরে পরেছে গাছ হাসপাতাল এলাকাতেও। তবে সম্পদের ক্ষতি হলেও এখনো কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সপ্তাহের অধিক টানা বৃষ্টিতে কাজে বের হতে পারছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ।

 

প্রশাসন কর্তৃক দূর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য  ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ, শিল্পকলা একাডেমি , মডেল স্কুল, উপজেলা মিলনায়তন এবং স্বস্ব এলাকা সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ জায়গায় অবস্থান না করে আশ্রয় কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থান খুঁজে  নেওয়ার জন্য  সকলে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন এর পক্ষ হতে বিশেষ  অনুরোধ  করা হয়েছে।

 

অন্যদিকে, জুরাছড়ি উপজেলা টানা ভারী বর্ষনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আউশ মৌসুমে ২০২ হেক্টর জমির রোপিত ধান ও প্রায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

 

জুরাছড়ির দুমদুম্যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, জুরাছড়ি ইউনিয়নের লুলাংছড়ি, সাপছড়ি, সীতারামপাড়া, মিতিংগাছড়ি, ডেবাছড়া কুসুমছড়ি, বালুখালী, মধ্যভিটা, শীলছড়ি, ঘিলাতলী বনযোগীছড়া ইউনিয়নে বহেরাছড়ি, ধামাইপাড়া, ছোট পানছড়ি, বেকাবেক্যা, শুকনাছড়ি, চুমাচুমি, মৈদং ইউনিয়নের পানছড়ি, ভুয়াতলী, জামের ছড়ি, হাজাছড়ি, বারাবান্যা। দুমদুম ইউনিয়নে ডানেতেছড়ি, বস্তিপাড়া, বরকলক, করইদিয়া, চাম্পাইপাড়া ও গবছড়ি বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল নামায় নিম্ন অঞ্চলে বসবাসর জনগণ আতংকে রয়েছে।

 

জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির এলাকা পরির্দশন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় তালিকা  তৈরির করে জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির এরাতে পুলিশ ও উপজেলা পরিষদের একটি টিম মাঠে কাজ করছে।

অন্যদিকে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ী এলাকা রাজস্থলীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের হাজীপাড়া যাওয়ার রাস্তার বেইলি ব্রিজটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশংকায় পাহাড়ের নিচে বসবাসরতদের নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরাতে এবং সতর্ক করতে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।

 

বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা বলেন, বাঙ্গালহালিয়া ডাকবাংলা পাড়ায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাঙ্গালহালিয়া বাজারসহ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পিছনের দিকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তবে বড় ধরনের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান।

 

এদিকে, রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় মাটি ধসে কয়েকটি বসতঘর ধসে পড়েছে। রাইখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এসএম নাছির উদ্দীন জানান, রাইখালী রিফিউজি পাড়া, বড় ঝিরিপাড়া ও রাইখালী বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে টিুট, ভট্ট, জাহাঙ্গীর আলম, আজিম, আবদুর রশীদ, হারুন ও নেজামের ৮টি ঘর পাহাড় ধসে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বড়ইছড়ি কাপ্তাই ক্লাবের পাশের অনিল তনচংগ্যা ও চিৎমরম সিড়িঁঘাট এলাকার আরও ২টি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান মংক্য মারমাকে অবগত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, রাইখালীর ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের খবর জানতে পেরেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান বলেন, একটি প্রাণও যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে তার জন্য বৃষ্টির মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারভিডিপি, ফায়ারসার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল উপজেলা গুলোকেও ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাঙামাটি শহর ও উপজেলায় মোট ১৮২ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের খাবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট