চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের একাংশের নেতা আসেফ বিন তাকি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ প্রশাসন। একইসঙ্গে নানা অপকর্মে ‘বিতকির্ত’ এই ছাত্রলীগ নেতাকে সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী সঙ্গ দিলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় তাকির বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে নেয়া যাবতীয় সিদ্ধান্ত শনিবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা জানিয়েছেন চমেক অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘নিষিদ্ধ থাকার পরও তাকি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষকসহ সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত আরও দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে সভায়।’
এর আগে গত ২ আগস্ট অবৈধভাবে দখলে থাকায় চমেক প্রধান ছাত্রাবাসের ১২-বি কক্ষ থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক আসেফ বিন তাকিকে মালামালসহ বের করে দেয় কলেজ প্রশাসন। এ সময় বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীর দখলে থাকা দুটি কক্ষও সিলগালা করে দেয়া হয়। তাকি চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস এসোসিয়েশনের (আইডিএ) সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেয়ার পর ইন্টার্ন চিকিৎসক আসেফ বিন তাকি কলেজ প্রশাসন, হোস্টেল তত্ত্বাবধায়কসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংবাদ প্রকাশ করায় মিডিয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষ যেন কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ন বা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হলো। নির্দেশনা অমান্য করে কোনো বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বা ইন্টার্ন চিকিৎসক কোনো ছাত্রাবাস বা কলেজ ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে প্রবেশ বা অবস্থান করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হলো।
সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বা অবাঞ্ছিত ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে দলবদ্ধভাবে কলেজ ক্যাম্পাস বা হোস্টেলে অবস্থান করতে দেখা গেলে ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, চমেক প্রধান ছাত্রাবাসের কক্ষ দখল করে রাখা, কর্মচারীকে মারধর, হোটেল ও ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা প্রদান না করা, ক্যান্টিনের ব্যবস্থাপককে মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা আসেফ বিন তাকি’র বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই ছাত্রাবাসের মেস ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামকে দুই দফায় মারধর করেন তিনি। এ সময় তার দাঁড়ি ছিড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করেন রফিক। চমেক অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগে রফিক ‘চাঁদা না দেয়ায়’ তাকে মারধর করা হয় বলে উল্লেখ করেন।
তাকির বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক পূর্বকোণের নিজস্ব প্রতিবেদক ইমাম হোসাইন রাজুকে মুঠোফোনে হুমকিও দেন ছাত্রলীগের এ নেতা।
পূর্বকোণ/মাহমুদ