ফেরি চলাচল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার খুঁজে পাচ্ছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। ৬ মাসে ৬বার টেন্ডার আহ্বান করেও পায়নি কাক্সিক্ষত ঠিকাদার। এখন নিজস্ব জনবল দিয়ে ফেরি চালাতে গিয়ে লেজে-গোবরে অবস্থা সওজের। ফেরি চলাচলে বিশৃঙ্খলা ও জোয়ারের পানিতে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাচ্ছেন মানুষ।
সওজ সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট সেতু এলাকায় চলাচলের জন্য তিনটি ফেরি ও পন্টুন স্থাপন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। ফেরি চলাচলের জন্য ঠিকাদার আহ্বান করা হয়। গত বুধবার ৬ষ্ঠ দফায় টেন্ডার দাখিল করা হয়। চারটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টেন্ডার ফরম দাখিল করে।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, ‘৬ষ্ঠ দফায় ফেরি চলাচলের টেন্ডার জমা নেওয়া হয়। টেন্ডার ফরম মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তবে তা-ও দেওয়া যাবে কিনা সন্দেহ সৃষ্ট হয়েছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী এক ঠিকাদার অভিযোগ দিয়েছে।’
সূত্র জানায়, ফেরি চলাচলের ইজারা পেতে দুটি সিন্ডিকেটের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলে আসছে। সিন্ডিকেটের রোষানল ও পরস্পরবিরোধী অভিযোগ-অনুযোগের কারণে বেকায়দায় পড়েছে সওজ।
এদিকে, গত ১ আগস্ট থেকে সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কালুরঘাট রেলসেতু। যানবাহন পারাপারে বিকল্প হিসেবে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। নিজস্ব জনবল দিয়ে ফেরি চলাচল করে আসছে সওজ। নিজস্ব জনবল দিয়ে ফেরি চালাতে গিয়ে লেজে-গোবরে অবস্থা সওজের। চরম অবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
সওজ জানায়, প্রথম দুইদিন একটি করে ফেরি চলাচল করেছে। অথচ চলাচলের জন্য তিনটি ফেরি আনা হয়েছে। চালক ও জনবল সংকটে ফেরি চলাচলে হিমশিম খেতে হচ্ছে সওজকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ফেরি চলাচলে চালক ও জনবল সংকট রয়েছে। তাই দুইদিন ধরে একটি করে ফেরি চালাতে হয়েছে। সেই সংকট এখন আর থাকবে না। বিভিন্ন স্থান থেকে চালক ও জনবল আনা হয়েছে। প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, গত বুধবার বিকেল থেকে দুটি ফেরি চলাচল করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ফেরি চলাচলের প্রথম দিনেই পন্টুন ও সংযোগ সড়ক জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। এসময় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হাঁটু ও কোমর সমান পানি মাড়িয়ে নদী পারাপার হতে হয় শত শত মানুষকে। বিশেষ করে শিশু, মহিলা, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফেরি পারাপার হতে তিনদিন ধরে অবর্ণনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বোয়ালখালীবাসী।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, স্বাভাবিক সময়ের জোয়ার-ভাটার ভারসাম্য করে পন্টুন বসাতে হয়। না হলে ভাটার সময় ফেরি চলাচল ও যানবাহন উঠা-নামায় সমস্যা সৃষ্টি হবে। ভরা পূর্ণিমা ও বৃষ্টিতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এজন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এখন থেকে তিনটি ফেরি চলাচল করছে।
২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়েছিল কালুরঘাট সেতু। সংস্কার কাজের জন্য ১১ মাস সেতুর উপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ওই সময়ে কর্ণফুলী নদীতে চারটি ফেরি সার্ভিস চালু ছিল। ২০০৫ সালের ২২ জুন সংস্কারের পর সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৬ ও ১৯৯৭ সালেও দুই দফায় সংস্কার কাজের জন্য সেতু উপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। দুইবারই যানবাহন পারাপারে বিকল্পব্যবস্থা হিসেবে ফেরি সার্ভিস চালু ছিল।
পূর্বকোণ/মাহমুদ