সংস্কার কাজের জন্য কালুরঘাট সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে সবধরনের যানবাহন আগামী তিনমাস পর্যন্ত সেতু দিয়ে পারাপার করবে না। ফলে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটের ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এসময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেরি সার্ভিস যানবাহন পারাপার করবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। চলতি বছরে ট্রেন পরিষেবায় যুক্ত হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলা। তবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের কালুরঘাট সেতুটি ট্রেনের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভারী ইঞ্জিন বহন করতে সক্ষম নয়। ফলে সেতুটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করছে রেলওয়ে। এ কাজের জন্য গত ১৮ জুন ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি কালুরঘাট সেতু মেরামত, নবায়ন ও পথচারী পারাপারের জন্য পৃথক একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করবে। সেতুর সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে সাইটে নির্মাণ সামগ্রী ও ইকুইপমেন্ট মোবিলাইজেশন শুরু করেছে। এই মাসে সেতুর ডেকিং ডিসমেন্টলিং এর কাজ শুরু হবে।
রেলওয়ের (পূর্ব) প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা পূর্বকোণকে বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেতুর প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ শেষ করে হায়ার এক্সেল লোড ক্ষমতা সম্পন্ন লোকো মোটিভ চলাচলের উপযোগী করা হবে। সেই লক্ষ্যে সেতু সংস্কার কাজ চলবে। আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করা যাবে। পরবর্তী অন্যান্য কাজ শেষ হলে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। এ কাজ শেষ হলেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
গত মার্চ মাসে সেতু দিয়ে ভারী এবং বড় আকারের যানবাহন চলাচলে উচ্চতা প্রতিবন্ধক দেয় রেলওয়ে। এতে সীমিত হয়ে আসে যানবাহন পারাপার। ওই সময় ফেরি সার্ভিসের সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও টোল নির্ধারণের জটিলতায় আটকে যায় ফেরি চলাচল। ফলে নগরগামী ভারী ও বড় আকারের গাড়িগুলো কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করছে।
সওজ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, গত ২১ জুলাই থেকে নদী পথে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। যানবাহন পারাপারে ফেরি ব্যবহার করা যাবে। দুটি ফেরি নিয়মিত যানবাহন পারাপার করবে। একটি স্ট্যান্ডবাই থাকবে।
বিগতদিনে ফেরি পারাপারের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের। ফলে তারা নতুন সেতু নির্মাণ না হলে ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে জানান।
ফেরি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় জানিয়ে বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মোমিন বলেন, ৯২ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ একমুখী কালুরঘাট সেতু সংস্কার করলে তার কতোটুকু সুফল আসবে তা বোঝার জন্য বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় না। এর আগেও বেশ কয়েক দফায় সেতুটি সংস্কার করা হয়েছিল। ফলে ভোগান্তি বিগতদিনের তুলনায় আরো বাড়বে।
কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণে দাবি জানিয়ে আসছেন দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা চট্টগ্রামবাসী। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সেই দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। সেতুর দাবিতে ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্নভাবে আন্দোলন করছে এ অঞ্চলের মানুষ। প্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল ও প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দীন আহমদ এ দাবি জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরেছিলেন। যদিও সরকার সেতু নির্মাণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি।
চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, সংস্কারের জন্য সেতু বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ফেরি পারাপারে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয় সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। নতুন সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের এই আমলে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে পাশ করতে ও ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ