১৬ বছর আগে একদিন সকালে বড় বোনের সাথে ঝগড়া করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মর্জিনা আক্তার পাপড়ি। উঠে পড়ে পাশের রেলস্টেশনের একটি ট্রেনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাপড়িকে নিয়ে ছেড়ে দেয় ট্রেনটি।
এভাবেই আনুমানিক ১২ বছর বয়সে পরিবার থেকে হারিয়ে যায় পাপড়ি। কখনোই ভাবেনি দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার সে খুঁজে পাবে পরিবারকে। এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে বসবাস করা আমেরিকান এক দম্পতির জন্য।
শনিবার (২৯ জুলাই) নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে ১৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া চট্টগ্রামের বালুচরা এলাকার বাবুল মিয়া ও সেমনারা দম্পতির চতুর্থ মেয়ে পাপড়িকে তুলে দেয়া হয় তার পরিবারের কাছে। এ উপলক্ষে একটি আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল ও সমাজসেবা অধিদপ্তর।
এতদিন পর পরিবারকে খুঁজে পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা পাপড়ি বলেন, বোনের সাথে রাগ করে চলে যাই। বুঝতে পারিনি এভাবে সবার থেকে হারিয়ে যাবো। যখন সেফহোমে ছিলাম নিজেকে খুব অসহায় মনে হত। আমি জানি না কে আমি, কোথা থেকে এসেছি। একদিন বার্লিন পরিবারের সাথে পরিচয় হয়। তাদের পাঁচ সন্তানের মত আমাকেও তারা সাত বছর পালন করেন।
পাপড়ি আরও বলেন, আমি নিজেই জয়া মায়ের কারণে আজ স্বাবলম্বী হয়েছি। এছাড়া আমার বাবা মা ভাইবোন সবাইকে আবার দেখতে পেয়েছি। বড় হয়ে জয়া ও জ্যাকব বার্লিনের মত মানবিক মানুষ হতে চান বলে জানান তিনি।
১৬ বছর পর মেয়েকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া সেমনারা বেগম বলেন, মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রায় কান্না করতাম। ভেবেছিলাম এ জীবনে হয়তো মেয়ের সাথে আর দেখা হবে না। মেয়েকে খুঁজে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।
বিজয় ইন্টারন্যাশনালের সিও জয়া বার্লিন বলেন, আমি আগে একটি এনজিওতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করতাম। বাংলাদেশে মূলত আসি এখানের এতিম, অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করতে। এসেই ফরিদপুরের সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে যোগাযোগ করি। ২০১৬ সালে সেখানেই পাপড়িসহ অনেকগুলো মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।
বার্লিন বলেন, পাপড়ির কষ্টগুলো আমাকে বেশি স্পর্শ করে। আমি আদালতের মাধ্যমে তাকে আমার প্রতিষ্ঠান বিজয় ইন্টারন্যাশনালে নিয়ে যাই। পাপড়ির সাথে আমার একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। পাপড়ি থেকে জানার চেষ্টা করি তার ঠিকানা। তার যা মনে ছিল তা সে বলে। তারপর তাকে নিয়ে চট্টগ্রামে আসি। এভাবেই অনেক কাঠগড় পুড়িয়ে তার পরিবারের সন্ধান পাই।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ফরিদপুর সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এস এম সুজাউদ্দিন রাশেদ জানান, ২০১২ সালে একদিন সকালে রাস্তার ধারে বসে কান্না করছিল পাপড়ি। তাকে দেখে কিছু পথচারী কী হয়েছে জানতে চাইলেও কিছুই বলতে পারেনি সে। পরে তারা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর আদালতের মাধ্যমে তার স্থান হয় ফরিদপুর সেফহোমে। সেখানে দুই বছর থাকার পর উন্নত জীবনের জন্য তাকে পাঠানো হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় আমেরিকান নাগরিক জয়া বার্লিন ও জ্যাকব বার্লিন দম্পতির সাথে। পাপড়িকে আদালতের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়।
পূর্বকোণ/মাহমুদ