চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে এটাতে সবাই একমত : সুজন

অনলাইন ডেস্ক

২৭ জুলাই, ২০২৩ | ৮:২৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, অর্থনীতি হলো রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। দেশের সম্পদ অতীতেও পাচার হয়েছে। যারা সম্পদ পাচারকারী তারা বিশ্বাসঘাতক। তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এখন অনেক বিদেশি সরব। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ৭১ এ জয়ী হয়েছি। আমরা দেশের মানুষ এক হলে কেউ কিছু করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন সবা প্রার্থীর প্রচারণার কথা এসেছে সেটা বঙ্গবন্ধুর আমলে হয়েছিল। সকল দেশপ্রেমিক শক্তি একমত হই আসুন। আমরা এক মায়ের সন্তান। জেল জুলুম মামলা আমরাও ভোগ করেছি। ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়। কেউ কাউকে মারব না। নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে এটাতে সবসময় সবাই একমত। পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত আছে। নিজেরা আলাপ করে ঠিক করি আসুন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নগরীর স্টেশন রোডের মোটেল সৈকতে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) আয়েজনে ‘নির্বাচন ও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আসন্ন উত্তরণ- জনপ্রত্যাশা ও অংশীজনদের দায়িত্ব শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন, এত ঘনবসতি পূর্ণ এক দেশে তিনটি বিভাগ- নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ১৬টি থানায় ১০২৭টি মামলা এখন। আরো মামলা আছে। এসব মামলা দিয়েছে প্রশাসন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মত একজনের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা। ডা. শাহাদাতের বিরুদ্ধে ৯৮টা মামলা। গায়েবি মামলায় আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। আপনারা ভোট করতে চান। গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত ভোট। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তা দিতে সমস্যা কী। একে অন্যের মতের প্রতি সহিষ্ণুতা থাকতে হবে। একজন আরেকজনকে সহ্য করতে না পারলে গণতন্ত্র হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার শব্দ এটাতে যদি আপত্তি থাকে তাহলে অন্য নাম দেন।

সিপিবি জেলা সভাপতি অশোক সাহা বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবসায়ী ও কোটিপতিদের হাতে রাজনীতি জিম্মি। রাজনীতি ও চাঁদাবাজি একযোগে চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কোনো ধরণের সরকারই টেকসই হবে না।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, নির্বাচন কিভাবে করব। রাতের নির্বাচন হলে আমরা যাব না। ঢাকা ১৭ তে কত ভোট কাস্ট হয়েছে? এভাবে হলে কেউ যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক কাকে দিবেন? আগেও তো দিয়েছিলেন। সুষ্ঠু ভোট দেন। উন্নয়ন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সব আমি একা করছি তা নয়। জনগণ চায়, জনগণের টাকায় উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন হতে হবে দুর্নীতি মুক্ত। শুধু উন্নয়ন করলে হবে না। ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিছু দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

স্বাগত বক্তব্যে বিইআই এর প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত (অব.) এম হুমায়ুন কবির বলেন, শান্তির জন্য আলোচনা। মত পার্থক্য থাকতে পারে। দেশ এখন যে পরিস্থিতিতে তাতে সংঘাত কেউ চায় না। গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সেটা ধরে রাখতে চাইলে শান্তির প্রয়োজন। অশান্তি শুধু অগ্রগতি থামায় না, সমাজকে ভেঙে দেয়। আমরা যথেষ্ট আত্মত্যাগ করেছি। আর বিধংসী কিছুর প্রয়োজন নেই। সেই আত্মত্যাগ মাথায় রেখে সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। গভর্নেন্সে আমাদের সমস্যা বহুকালের। সেটা কোনো এক দলের সমস্যা না, সকল দলের সমস্যা। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দেশ। কিন্তু সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা আমরা এখনো করতে পারিনি। এর দায় আমাদের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। সমাজ ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। এর পরিবর্তন ইতিবাচক না নেতিবাচক? ডিজিটালাইজেশেন কিন্তু সমাজের কাঠামো বদলে দিচ্ছে। আমাদের সনাতন মূল্যবোধ গুলো কিভাবে টিকিয়ে রাখব সেই আলোচনাও জরুরী। মোটা দাগে বিনিয়োগ, ব্যবসা নীতি, নারীর অগ্রযাত্রা নিয়ে তেমন মত পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। এতে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। শান্তিপূর্ণ- গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রয়োজন। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন খুব জরুরী। দেশের ৮টি স্থানে আমরা এ মত বিনিময় করেছি। আজসহ সারাদেশেই প্রপোশনেট প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবটি এসেছে। এটি বিবেচনা করা যায়।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ডা.একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজনীতিবিদরা তাদের কাজ করবেন। আমরা পেশাজীবীরা সময়মত ভয়েস রেইজ করছি বলে মনে হয় না। সমাজের নানা অংশের প্রতিনিধিরা অন্যায় হলেও প্রতিবাদ করছে না। সমাজের মধ্যেকার যে সম্পর্ক তা সতেজ নয়। বিদেশি কূটনৈতিদের আমরা সকলে মিলে তোয়াজ করছি। যেন জনগণের কোনো প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যত প্রজন্মের আশা কী? তারা মোবাইল আসক্ত। একদিকে মাদক অন্যদিকে মোবাইল আসক্তি। লেখাপড়ায় তাদের মনযোগ নেই। এই নতুন প্রজন্মকে আমরা ধ্বংস করছি। টাকা খরচ করে কোনো প্রচারণা রাখা যাবে না। দুর্নীতিবাজ মাদক ব্যবসায়ী যেন ভোটে দাঁড়াতে না পারে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করতে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন প্রয়োজন। জবাবদিহিতা পুরোপুরি আনতে হবে। উন্নয়ন হয়েছে। সাতটা লাইসেন্স আনতে সাত জায়গায় যেতে হয়। আবার ঘুষও দিতে হয়। উন্নয়ন সহজ। দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি বন্ধ করতে কোনো সরকার পারেনি। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক বলেন, রাতারাতি যদি পাল্টে যেত চিত্র তাহলে কথা ছিল না। গত নির্বাচনের পর থেকে ভোট নিযে সবাই চিন্তিত। নির্বাচনের সঠিক পথ কি হবে তা নিয়ে মানুষও ভাবছে। সংকট উত্তরণে জাতীয় পর্যায়ে ডায়লগ প্রয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে। তিনি উদ্যােগ নিলে সমাধান হবে আশা করি। উন্নয়নের মর্যাদা যেমন প্রয়োজন সক্ষমতা অর্জনও জরুরী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো শফিকুল ইসলাম বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। সমান সুযোগ ছিল না। গত কয়েকটি নির্বাচন কেমন তা সবাই জানে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে গড়ে উঠেনি। ফলে তারা যখন যে সরকার থাকে তাদের পক্ষে কাজ করে। ফলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। বিপরীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন গুলো হয়েছে সেগুলো গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমাদের কালচার আর অন্য দেশের কালচারের পার্থক্য আছে। আমাদের সিস্টেম ডেভেলপ করেনি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা কঠিন। যারা ভোটে অংশ নিবে না, কোনো ভাবে লাভবান হবে না, তাদের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওযার সুযোগ বেশি। দল গুলো যদি জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করত তাহলে আস্থার সংকট হতো না। একে অন্যকে দমনের নীতি থেকে বের হতে হবে। লিমিটেড ডেমোক্রেসি ও উন্নয়ন সবার জন্য উন্নয়ন হয় না। একটা অংশ সম্পদ লাভ করে। সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন হতে হবে।

আলোচনায় অংশ নেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জসিম চৌধুরী সবুজ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়বাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব অধ্যাপক নসরুল কদির, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, ইউনাইটেড ল’য়ার ফ্রন্ট চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জহুরুল আলম, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের উৎপল বড়ুয়া, নজরুল ইসলাম আশরাফী প্রমুখ।

পূর্বকোণ/আরআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট