ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতি। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একের পর এক কর্মসূচির কারণে রাজনীতির পরিবেশ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে জনগণ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপি। অপরদিকে বিএনপির দাবি প্রত্যাখান করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে দুই দলই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে। বসে নেই দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও। তারা এ দুই দলের পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপির একের পর এক কর্মসূচি দেওয়ায় কোন কোন এলাকায় আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। তাতে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে দুই দলের নেতাকর্মীরা।
রাজনৈতিক এ সংঘাত থেকে মুক্ত নয় চট্টগ্রামও। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই বুধবার বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ি নুর আহমেদ সড়কে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ওই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এ কর্মসূচির পর নগরীর ওয়াসার মোড়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়ী করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, নৌকার প্রার্থীর কার্যালয় ভাংচুরের পরপরই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপির কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। এসময় তারা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করে। পরে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।
দুটি ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৬ জন এবং বিএনপির ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয় দু’দলের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি দশটি গাড়ি ভাংচুর করা হয় বলেও দাবি তাদের। একইদিন বিকেলে দুটি ঘটনায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টপাল্টি হামলার ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন বৃহস্পতিবার সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার বিএনপির কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ।
এদিকে এ ঘটনার একদিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের কমলদহ এলাকায় মুখোশ পরে দুই যুবলীগ কর্মীর উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন এবং বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনার কারণে জনমনে ক্রমেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের।
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘বিএনপি আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তাদের জানা উচিত- যে আগুনে তাদের নিজেদের হাতই পুড়বে।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। এক লক্ষ মামলা, ছয়শত নেতাকর্মীকে গুম ও হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপিকে কি দমাতে পেরেছে? বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং ভয় দেখিয়ে নেতাকর্মীদের আন্দোলন থেকে দূরে সরে রাখা যাবে না।’
পূর্বকোণ/মাহমুদ