২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাত থেকে আয় হয় সর্বসাকূল্যে চার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থ বছরে হাসপাতালটির প্রধান এই খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সাত বছরের ব্যবধানে বেড়েছে চারগুণ।
আয় বৃদ্ধির এমন সাফল্যের পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীবান্ধব ছয়টি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত কাজ করেছে বলে দাবি করেছেন। যদিও এ আয়বৃদ্ধির হার আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন কর্তৃপক্ষ। এজন্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘদিনের বিরাজমান জনবল সংকট দূর এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করার উপর তাগিদ দিয়েছেন হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিরা। তাদের জোর দাবি, যুগোপযুগী করে গড়ে তোলার জন্য আলোচ্য আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হলে সরকারি এ হাসপাতালের আয় বহুগুণ বাড়বে। একইসঙ্গে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদের আস্থার ঠিকানা হয়ে দাঁড়াবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে আয় হয় চার কোটি টাকার কিছু বেশি। পরবর্তী ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে আয় হয় ৭ কোটি ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৭ টাকা। এরমধ্যে ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৫২ হাজার ৯৪০ টাকাই হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাত থেকে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে আয় হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৩ টাকা। তারমধ্যে ৯ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ২৮৫ টাকাই আয় হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাতে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আয় হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬৮ টাকা। তারমধ্যে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৩১ হাজার ২৪০ টাকা আয় হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাত থেকে। আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে কিছুটা আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ২৭৩ টাকা। তারমধ্যে ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬১৫ টাকা আয় হয় পরীক্ষা নিরীক্ষার খাত থেকে।
তবে আগের অর্থ বছর থেকে অনেকটাই আয় বাড়ে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে। এ বছর আয় হয় ১২ কোটি ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫৭ টাকা। যারমধ্যে ১১ কোটি ৫০ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৫ টাকা হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাত থেকে করা আয়। সর্বশেষ নানা সংকটের মধ্যেও বিদায়ী ২০২২-২০২২৩ অর্থ বছরে আয় হয় ১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৫০১ টাকা। এরমধ্যে শুধুমাত্র ১৫ কোটি ৪০ লাখ ৪৩০ টাকা আয় হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাত থেকেই। যা গত ছয় বছর আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি আয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ আয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা শুধুমাত্র ২০ শতাংশ রোগীদের কাছ থেকে হয়েছে। বাকি অংশের মধ্যে একটি অংশ দালালের খপ্পরে, আবার অনেকেই আস্থার ঘাটতি ও সঠিক সময়ের মধ্যে সেবা না পাওয়ার কারণে বেসরকারি ল্যাবগুলোতে যেতে বাধ্য হন। যার কারণে আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে জনবল কাঠামোসহ আরও সেবামুখী সিদ্ধান্তের উপর গুরুত্ব দিলে আলোচ্য আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ন কবির বলেন, ‘অটোমেশন পদ্ধতি চালুকরণ, মানসম্মত সেবার পরিধি বৃদ্ধি, দালাল নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, কঠোর তদারকি এবং চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিকতার ফলে আয় বেড়েছে বৃহৎ এ হাসপাতালের। তবে এ আয় আরও বাড়ার কথা। কিন্তু বছরখানেক ধরে হাসপাতালের এমআরআই, হৃদরোগের একটি ক্যাথল্যাব মেশিন, স্তন ক্যান্সার শনাক্তের মোমোগ্রাফি মেশিনসহ কয়েকটি মেশিন বন্ধ থাকায়, এ খাত থেকে আয় হয়নি। না হলে আয় আরও বৃদ্ধি পেত।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরে প্রথমবারের মতো চমেক হাসপাতালের রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। আগে চমেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতির সংখ্যা কম থাকলেও গত দুই বছরে তা অনেক হারে বেড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন থেকেই হাসপাতালজুড়ে দালালদের আনাগোনা থাকলেও গত বছরের শুরু থেকে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে তা অনেকাংশেই দূর হয়েছে। এর বাইরে চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় ও তদারকির কারণেই এখন হাসপাতালেই রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংখ্যা তুলনামূলক পূর্বের চেয়ে বেড়েছে। যার জন্য আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ