চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা ও লাশ গুমের অপরাধে হত্যাকারী ঘাতক স্বামীকে ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ব্রিজঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামি মামুনুর রশীদ (৫০) আনোয়ারা থানার কৈখাইন গ্রামের আব্দুল শুক্কুরের ছেলে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার জানান, নিহত ভিকটিম কলি আক্তার বরগুনা জেলার তালতলী থানাধীন নিদ্রারচর এলাকার বাসিন্দা। সে গত ২০০২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামে এসে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে আসছিল। চাকরি করাকালীন আসামি মামুনুর রশীদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং ভিকটিম তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার তাদের বিবাহের বিষয়টি মেনে নেয়। তাদের ঘরে একটি ৩ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। বিবাহের পর থেকে মামুনুর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুক দাবি করে আসছিল। মেয়ের সুখের আশায় সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ঘাতক স্বামীকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেয়। উক্ত টাকা দিয়ে ঘাতক স্বামী উশৃঙ্খল জীবনযাপন করিয়া নষ্ট করে ফেলে। ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদ ডাকাতিসহ বিভিন্ন ফৌজদারী মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে কলির পিতা-মাতা মেয়ের সুখের জন্য ঋণ করে ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদকে ১ বছর ৮ মাস পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত করে। জামিনে মুক্ত হয়ে কর্মহীন অবস্থায় আরো ৫০ হাজার টাকার জন্য ভিকটিম এবং তার পরিবারকে চাপ দেয়। ৫০ হাজার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী মামুনুর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমকে মারধর ও নির্যাতন শুরু করে।
তিনি আরও জানান, গত ২০০৯ সালের ২৬ মে বিকাল আনুমানিক ৩টায় ভিকটিমের মা ফোন করে ভিকটিম কলি আক্তারের খবর জানতে চাইলে ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদ জানায় কলি আক্তার ডায়রিয়ায় আক্তান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর ঘাতক মামুনুর রশীদ মোবাইল ফোনে ভিকটিমের মাকে জানায় তার মেয়ে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এবং দাফন-কাফনও শেষ। কলি আক্তারের পিতা-মাতাকে না জানিয়ে দাফন করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে মামুনুর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে ভিকটিমের পরিবার আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভিকটিম কলি আক্তারকে হত্যা করে এবং হত্যার আলামত গোপন করার জন্য তাড়াহুড়া করে কাউকে না জানিয়ে দাফন করে ফেলে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় মামুনুরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরধারি অব্যাহত রাখে র্যাব। এর ধারাবাহিকতায় তাকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়।
পূর্বকোণ/রাজীব/এএইচ