বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিদেশিরা আসায় আওয়ামী লীগ ভালো সেজেছে। আওয়ামী লীগ বলে তারা নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। হাসবো না কি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। ভূতের মুখে রাম নাম। মানুষ বার বার বেলগাছ তলায় যায়? কারণ মানুষ জানে ওখানে গেলে ভূতে ধরবে। আমরা কি জেনেবুঝে তাদের ফাঁদে পা দেবো? তারা আমাদের আবার বেলতলায় নিয়ে যেতে চায়। আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটা বকধার্মিক দল। বক নদী, বিলে এক পা দিয়ে চুপ করে বসে থাকে, যে-ই একটা মাছ নিচ দিয়ে যায় টুপ করে খেয়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ চুপ করে বসে থেকে নতুন করে ফাঁদ পেতেছে, যাতে টুপ করে আবার ক্ষমতায় চলে আসতে পারে।
রবিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদলের দেশ বাঁচাতে শ্রমজীবী মানুষের জাগরণ’ শীর্ষক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের সঙ্গে গোপন সন্ধি করে জোর করে ক্ষমতায় বসেছিল। সেদিন থেকে এদেশের জনগণ আন্দোলনে নেমেছে। আন্দোলন এখনও চলছে। দেশের মানুষকে মুক্ত করার, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন এখনও চলছে। আওয়ামী লীগকে বলতে চাই, দয়া করে খেলায় ক্ষান্ত দেন। অনেকদিন ক্ষমতায় ছিলেন। জনগণ ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসবেন। দয়া করে জনগণকে একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ দেন। না দিলে বাংলাদেশের জনগণ জানে কি করে এটা আদায় করে নিতে হয়। বন্দুক দিয়ে, মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। ১৯ জুলাই সারাদেশে বিএনপির এক দফা দাবিতে পদযাত্রা হবে। এটা মার্চ ফর ভিক্টোরি। অর্থাৎ বিজয়ের জন্য যাত্রা।
তিনি বলেন, আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন চাই বলেই আমরা রাস্তায় নেমেছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন এমপি সংসদে গিয়েছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। ২০২৪ এর যে নির্বাচন আসছে, দয়া করে মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। মানুষকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দেন। এই সমস্যা শুধু খালেদা জিয়ার না, বিএনপির না, তারেক জিয়ার না। এই সমস্যা আজ পুরো জাতির। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করছিলাম একটি স্বাধীন মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য। আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু সবকিছু থেকে বাংলাদেশের মানুষ বঞ্চিত হয়ে গেছে শুধুমাত্র একটি কারণে। একজন ব্যক্তি, একটি পরিবার ও একটি দল ক্ষমতাকে নিজেদের কাছে চিরস্থায়ী করতে চায়।
আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে আবার ক্ষমতা দখলে নেয়ার পরিকল্পনা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে। ডিসি, এসপি, ইউএনও বানাচ্ছে তাদের পছন্দমতো লোকদের। নির্বাচন কমিশনের কথা আর কী বলব ! তারা কথায় কথায় বলে- খুব সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে সেরকম নির্বাচন দেব, কোনো দলকে প্রভাব বিস্তার করতে দেব না, তারা পারবে সবকিছু। আসলে তারা কোনোকিছুই পারবে না। তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। আগে যেখানে ইচ্ছে সেখানে নির্বাচন কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারত, এখন সেটা তারা পারে না। নির্বাচন কমিশন এখন ঠুঁটো জগন্নাথ।
তিনি বলেন, বিদেশিদের সামনে আওয়ামী লীগ দেখাচ্ছে, আমরা ভালো হয়ে গেছি, বিরোধী দলকে মিছিল-মিটিং, আন্দোলন করতে বাধা দিই না। কোনো হয়রানি করছে না। এখনও পর্যন্ত কোথাও হামলা মামলার খবর পাইনি। আমরা নোয়াখালী প্রোগ্রাম করেছিলাম, সেখানে একটু ঝামেলা করেছে। ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছি, কোনো ঝামেলা করেনি। কিন্তু এই যে, মার্কিন মন্ত্রীরা চলে গেলেন, এখন আবার শুরু করবে। কয়েকদিন আগে কুমিল্লার এক বিএনপি কর্মীর দুই হাতের কবজি কেটে নিয়েছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও একদলীয় শাসনের সব ব্যবস্থা সরকার করে রেখেছে।
সরকার বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি হচ্ছে লুটেরাদের ভাগ, যারা ক্ষমতার বলে জনগণের টাকা লুট করে খাচ্ছে, বাংলাদেশকে লুট করছে, শোষণ করছে। আরেক ভাগ সাধারণ মানুষ, যারা এসব লুটেরাদের খপ্পরে পড়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। চট্টগ্রামে একটি টানেল হয়েছে। নদীর তলদেশে রাস্তা হাতেগোনা কয়েকটি দেশেই আছে। টানেল আমাদের দরকার, আমরাও খুশি। টানেলে আপত্তি নেই। কিন্তু আমার ৮০ ভাগ লোক ১০ টাকায় কেজি দরে চাল খেতে পারছে না। এই ৮০ ভাগ লোক যদি অসুস্থ হয়, তাহলে তাদের জন্য সরকারি হাসপাতাল করা হয় না, সরকারি স্কুল করা হয় না। গত ১৫ বছরে কয়টি সরকারি স্কুল, হাসপাতাল হয়েছে খোঁজ নেন। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার সবাইকে শোষণ করেছে, এখন ২২ হাজার পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। এরাই দেশের সব মানুষকে এখন শোষণ করছে।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ