চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

১৯ খালে যাচ্ছে নগরীর আবর্জনা

ইমরান বিন ছবুর

১৬ জুলাই, ২০২৩ | ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন ১৯টি খালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যাচ্ছে ডাস্টবিনের আবর্জনা। এসব খালের পাড়ে প্রয়োজন সত্বেও চসিকের ডাস্টবিন না থাকা এবং কিছু কিছু ডাস্টবিনের একাংশ ভাঙা থাকার কারণে আবর্জনা খালে যাচ্ছে। প্রকল্পভুক্ত খালের পাড়ে থাকা চসিকের ডাস্টবিন এবং খালের যেসব পয়েন্টে সাধারণ লোকজন সরাসরি ময়লা-আবর্জনা ফেলে তার ৩০টি স্পট নিয়ে সম্প্রতি একটি তালিকা তৈরি করেছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। খাল পরিষ্কারের পরও সরাসরি খালে আবর্জনা যাওয়ার কারণে বারবার খাল ভরাট হচ্ছে অভিযোগ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। এভাবে ময়লা-আবর্জনা জমে খাল ভরাট হতে থাকলে ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন খোদ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক।

 

খালে আবর্জনা ফেলার ওই তালিকার তথ্য অনুযায়ী, চসিকের ডাস্টবিন ও নির্ধারিত স্থান থেকে এবং মানুষের সরাসরি ফেলা বর্জ্য পড়ছে পৃথক ১৯ খালে। এর মধ্যে ডাস্টবিন না থাকায় সরাসরি ১৪টি খালের ভেতর ময়লা ফেলা হয় এমন স্পট রয়েছে ১৭টি। এছাড়া ৯টি খালের পাড়ে ১৪টি স্পটে ডাস্টবিন বা ময়লা ফেলার জন্য স্থান নির্ধারিত আছে চসিকের। তবে এসব ডাস্টবিনের কোনো কোনোটি ভাঙা। ফলে ডাস্টবিনে মানুষের ফেলা আবর্জনার প্রায় অর্ধেক পার্শ্ববর্তী খালে পড়ে যাচ্ছে। আবার ডাস্টবিন ভালো থাকলেও নানা কারণে এসব ডাস্টবিন বা নির্ধারিত স্থানের ময়লা খালে যাচ্ছে।

 

জলাবদ্ধতা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের করা ওই তালিকার কয়েকটি স্পটে গত কয়েকদিনে সরেজমিন পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদক।

 

গতকাল (শনিবার) সকালে চাক্তাই খালের চকবাজার ফুলতলা অংশে দেখা যায়, সেখানে থাকা জরাজীর্ণ ডাস্টবিনটির চারপাশে আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এরমধ্যে আবর্জনার বেশিরভাগ খালে গিয়ে পড়ছে। খালের ওই অংশ দেখে যে কারো মনে হবে কাঁচা বাজার ও বাসাবাড়ির সব আবর্জনা যেন খালে গিয়ে পড়ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, সম্প্রতি পরিষ্কার করা খালটিও এখন আবর্জনায় পূর্ণ।

 

একই দৃশ্য দেখা যায় চাক্তাই খালের ১৯ নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান নগর এলাকায়। মিয়াখান নগরের বাতামতলী মোড়ের ডাস্টবিনটি খাল ঘেষে। ডাস্টবিনের দুই পাশে দেয়াল থাকলেও বাকি দুই পাশে খালি। খালের পাড়ের অংশে কোন দেয়াল না থাকায় আবর্জনার একাংশ সহজেই খালে গিয়ে পড়ে। এছাড়া, জোয়ারের পানি বাড়লে পানির সাথে এসব আবর্জনাও খালে তলিয়ে যায়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালে আবর্জনা যাওয়ার কথা অস্বীকার করে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আলম মিয়া বলেন, এই ডাস্টবিনের ময়লার একটু অংশও খালে যায় না। যারা এ ধরনের অভিযোগ করছে তারা কোন কিছু না জেনেই বলছে। আমার এলাকার কোন ময়লা খালে যায় না।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে খালে ময়লা ফেলা। আমরা প্রকল্পভুক্ত খালগুলো বর্ষার আগেই পরিষ্কার করছি। কিন্তু লোকজন এখনো খালে ময়লা ফেলছে। ফলে পরিষ্কার করা খালগুলো পুনরায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের মনিটরিং করা উচিত।

 

তিনি আরো বলেন, অনেকগুলো খালের পাশে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন রয়েছে। এসব ডাস্টবিনের কোন কোনটিতে দেয়াল না থাকায় ডাস্টবিনের ময়লা খালে গিয়ে পড়ছে। আবার অনেকগুলো ডাস্টবিনের দেয়াল ভাঙা। ওসব ডাস্টবিনের ময়লাও খালে গিয়ে পড়ে। অন্যদিনে, অনেক জায়গায় ডাস্টবিন না থাকায় মানুষ সরাসরি ইচ্ছেকৃতভাবে খালে ময়লা ফেলে। এভাবে চলতে থাকলে প্রকল্পের সুফল মিলবে না। স্থানীয় কাউন্সিলরা যদি বিষয়টি দেখতেন, তাহলে লোকজন আরো বেশি সচেতন হতেন।

 

যে ১৯ খালে যাচ্ছে ডাস্টবিনের আবর্জনা :  প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী ৯টি খালের পাড়ে চসিকের নির্ধারিত ডাস্টবিন থাকার পরও খালে ময়লা যাচ্ছে। এসব খাল হচ্ছে- বাকলিয়া খাল, মহেশখালী খাল, চাক্তাই খাল, বদরখালী খাল,  সদরঘাট খাল, বামনশাহী খাল, শীতলঝর্ণা খাল, চশমা খাল ও শীতলঝর্ণা খাল।  অন্যদিকে ডাস্টবিন না থাকায় ১৪টি খালে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। খালগুলো হচ্ছে- রাজাখালী-৩, শীতলঝর্ণা খাল, মহেশখালী খাল, চাক্তাই খাল, টেকপাড়া খাল, সদরঘাট-১ খাল, মহেশ খাল, চাক্তাই ডাইভারশন খাল, গয়নাছড়া-২ খাল, খন্দকিয়া খাল, আকবরশাহ সিলট্রাপ খাল, আজববাহার খাল, নয়ারহাট খাল।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট