চোরাচালান রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য পরিবহন রোধে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটিসহ অত্যাধুনিক ছয়টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসানোর কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রথম পর্যায়ে আগামী অক্টোবর নাগাদ দুটি কনটেনার স্ক্যানার আসতে পারে চট্টগ্রাম বন্দরে।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি টেকনিক্যাল টিমের চার কর্মকর্তা চীন যাবেন কনটেইনার স্ক্যানার দেখতে। মূলত দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কনটেইনার স্ক্যানারগুলো তৈরি হয়েছে কিনা এবং সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা যাচাই করতেই চীন যাবেন এনবিআর কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে স্ক্যানার ক্রয়ের জন্য ব্যাংক এলসি করাসহ কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর সূত্র।
ছয়টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসাতে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চীনা প্রতিষ্ঠানটি স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পর আগামী ৫ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করবে।
উল্লেখ্য, এই ছয়টি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করোনার সময় ২০২১ সালের ৩১ মার্চ দরপত্র আহবান করার পর বিভিন্ন গ্যাঁড়াকলে চারবার পিছিয়েছিল টেন্ডরের তারিখ (২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট)।
সে বছর ২৫ আগস্ট টেন্ডারশেষে তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পাঠানো হয় মূল্যায়ন কমিটির কাছে। কিন্তু তাদের মধ্যেও যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এনবিআর। এর প্রেক্ষিতে এস্ট্রোফিজিক্স ইনকর্পোরেশন নামের এক দরদাতা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বিভাগ ‘সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ)’ এক অভিযোগ দাখিল করে। তবে এনবিআরের বিপক্ষে ওই অভিযোগ বাতিল করে সিপিটিইউ। পরে ওই দরদাতা আশ্রয় নেয় উচ্চ আদালতের। সেখানেও রায় এনবিআরের পক্ষে যায় এবং কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়।
পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস অডিট, মডার্নাইজেশন এন্ড ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার) ড. আবদুল মান্নান শিকদার গত বছরের (২০২২) ২৬ মে পুনরায় একই দরপত্র আহ্বান করেন। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে একনেকের অনুমোদন নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতেই ২০ মাস সময় ব্যয় হলো।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে সাতটি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে ‘এফএস ৬০০০’ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে ‘এফএস ৩০০০’ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি ২ ও জিসিবি ২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। তবে পুরোনো কয়েকটি স্ক্যানার মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে গিয়ে স্ক্যানিং কাজে ব্যঘাত ঘটায়।
পূর্বকোণ/মাহমুদ