চলতি জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গুরুত্বপূর্ণ দুই সড়ক প্রকল্প। বাকলিয়া এক্সেস রোড এবং আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-৩, এই দুই প্রকল্পের কাজ শেষে উদ্বোধনের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে সড়ক দু’টির প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাকলিয়া এক্সেস রোডের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এবং ফিডার রোড-৩ এর কার্পেটিং এর কাজ চলছে। সড়ক দুটিতে যান চলাচল শুরু হলে নগরীর বাকলিয়া ও চকবাজার এবং সাগরিকা সংলগ্ন এলাকায় যানজটের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি দূরত্বও কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এই দু’টি সড়ক ব্যবহারে মানুষের অর্থ ও সময় বাঁচবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এবং ঘনবসতিপূর্ণ বাকলিয়া এলাকার শাহ আমানত সংযোগ সড়কের পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত বাকলিয়া এক্সেস রোড প্রকল্প। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিডিএ। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। কিন্তু মামলা, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং দশতলা ভবন নিয়ে জটিলতায় প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ হয়নি।
অন্যদিকে, উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ নামে এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্পের অধীনে সাগরিকা স্টেডিয়াম থেকে বেড়িবাঁধ ফিডার রোড-৩ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। রেলওয়ের আপত্তিতে ফিডার রোড-৩ এ সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন অংশে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন আটকে ছিল। যার কারণে প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
সাগরিকার সংযোগ সড়কটি চালু হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী পণ্যবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো সরাসরি রিংরোড হয়ে টোল রোডে উঠতে পারবে। একইভাবে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো এ সড়ক দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে। ফলে চাপ কমে যানজটমুক্ত হবে অলংকার থেকে সিটি গেট পর্যন্ত পুরো এলাকা।
গতকাল সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাকলিয়া এক্সেস রোড প্রকল্পটির সড়কের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে সড়কের কোথাও কোথাও ফিনিশিং এর কাজ, কোথাও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ, কোথাও রোড মার্কিং এর কাজ চলছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমণি ঘাট থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম পর্যন্ত নির্মাণাধীন ফিডার রোড-৩ এর কাজ শেষ পর্যায়ে। ফ্লাইওভারের কার্পেটিং এর কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে। যা দ্রুত শেষ করার জন্য কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
বাকলিয়া এক্সেস রোডের প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, সব জটিলতা কাটিয়ে বাকলিয়া এক্সেস রোড প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সৌন্দর্যবধনের কাজ চলছে। চলতি মাসের শেষে প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
জানতে চাইলে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘ফিডার রোড-৩, অংশে ফ্লাইওভারের উচ্চতা নিয়ে রেলওয়ে থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাপের উচ্চতার কথা বলা হয়েছে। এ জটিলতা নিয়ে দীর্ঘসময় আমরা কাজ করতে পারিনি। সম্প্রতি জটিলতা শেষে আমরা ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করি। প্রায় ৯০০ মিটারের এই সড়কের কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে ফ্লাইওভারের কিছু কার্পেটিং এর কাজ বাকি আছে। চলতি মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ করে উদ্বোধনের মধ্যেমে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে আশা করছি।
জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, বাকলিয়া এক্সেস রোড এবং রিং রোড প্রকল্পের ফিডার রোড-৩ এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই প্রকল্প দু’টির কাজ শেষ হবে আশা করছি। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলে প্রকল্প দু’টি উদ্বোধন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ