ঘড়ির কাঁটা বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট। চমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন বিভাগের (১৩ নম্বর ওয়ার্ড) প্রবেশ গেটে রোগীর এক স্বজনকে ঘিরে আছেন দু’জন। তাদের একজন মোরশেদ। যিনি ওই রোগীর স্বজনের কাছ থেকে চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র নিজ হাতে নিয়েই বুঝাচ্ছেন- ‘কোথায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে’। কথা বলার ধরন দেখে মনে হতে পারে- তিনি হয়তো হাসপাতালেরই কর্মী। কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়া মাত্রই ‘ভোঁ দৌঁড়’ তার।
ওয়ার্ডের ভেতর যেতেই দেখা যায়- রোগীর শয্যার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাদের নামের আরেক যুবক। রোগীদের চিকিৎসা পত্রের ফাইলগুলো হাতে নিয়ে এমনভাবে নাড়াচাড়া করছেন, মনে হতে পারে তিনি হয়তো চিকিৎসক। তবে না! তারও পরিচয় জানতে চাওয়া মাত্রই মোরশেদের মতো ‘দৌঁড়’ তার।
কাদের ও মোরশেদের মতোই গতকাল শনিবার বিকেলে মেডিসিন ওয়ার্ডটিতে অন্তত ৮ থেকে ১০ জনের দেখা মেলে। যাদের কেউ ওয়ার্ডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রোগীর শয্যার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আবার কেউ রোগীদের ব্যবস্থা পত্র নিয়ে রোগীকে বুঝাচ্ছেন, কেউবা রোগীকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাচ্ছেন। যারা কেউই হাসপাতালে কোন কর্মী নয়। সকলেই ছিল বহিরাগত দালাল। বেসরকারি ল্যাব ও ওষুধ দোকানে রোগী ভাগিয়ে নেয়াই তাদের কাজ। বিকেলের চিত্রটি এমন ছিল যেন ‘দালালের হাট’ মেডিসিন ওয়ার্ডটি!
সংশ্লিষ্টরা জানান, চমেক হাসপাতালে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখায় এসব দালাল। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়েও রোগী ও স্বজনদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন তারা। বিভ্রান্ত করে রোগীদের তাদের নির্দিস্ট কিছু ল্যাব ও ওষুধ দোকানে নিয়ে গিয়ে হাতিয়ে নেন কয়েকগুণ অর্থও। কিছু বুজে ওঠার আগেই এসব দালালের খপ্পরে পড়ে পকেট পুতুর হয় রোগী ও স্বজনদের।
অভিযোগ আছে, প্রতিটি ওয়ার্ডের মুখে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য থাকা সত্ত্বেও অনায়াসে প্রবেশ-প্রস্থান কিংবা রোগী ভাগিয়ে নিতে কোন প্রকার বেগ পেতে হয়না দালালদের। বরং আনসার সদস্য এবং ওয়ার্ডে নিয়োজিত কর্মীদের ম্যানেজ করেই ওয়ার্ডের ভেতর রোগীর শয্যায় শুয়ে থাকতেও দ্বিধা করেন না তারা। এ জন্য অসাধু কর্মী ও আনসার সদস্যদেও মাসোহারা দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়মিত অভিযানের পরও কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না দালালদের দৌরাত্ম্য। এমনও অভিযোগ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘দালালমুক্ত রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই আমাদের টিম অভিযান চালায়। তবে মুশকিল হলো- হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসা-যাওয়া করে, এদের মধ্যে কে দালাল বা কে রোগী অনেক সময় চিহ্নিত করাটাও মুশকিল। তবে এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কেউ যদি সহযোগিতা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পূর্বকোণ/মাহমুদ