সাগরিকা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে খেজুরতলা রোডের তালতল বাই রোড। কর্দমাক্ত পানিতে ডুবে আছে সড়কের বেশিরভাগ অংশ। দেখলে মনে হয় যেন কোন ডোবা। সাধারণের চলাচলের কোন উপায় নেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ৪ নম্বর গেটে আসা দর্শকদের চলাচলের একমাত্র পথ এটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজের গত দুই ম্যাচে কয়েকহাজার দর্শককে কাদা পানি মাড়িয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে স্টেডিয়ামে। এরমধ্যে রয়েছেন বিদেশি অনেক দর্শকও। আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও স্টেডিয়ামে প্রবেশ পথে এ ধরনের ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ দেশি-বিদেশি এসব দর্শকরা।
গতকাল সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সাগরিকা মহিলা কমপ্লেক্স পেরিয়ে স্টেডিয়ামের চার নম্বর গেটের প্রবেশমুখে সড়কের এই ভয়াবহ অবস্থা। সড়কের যেন কোন অস্তিত্বই নেই। প্রবেশ পথে প্রচণ্ড গরমে কাদাপানিতে জলকেলি খেলছে কিছু হাসের ছানা। ভঙ্গুর রাস্তা দেখে থমকে যাচ্ছে রিকশা, অটোরিকশা বা পায়ে হেঁটে আসা দর্শকরা। কাদা পানি এড়াতে সড়কের পাশে সংকীর্ণ জায়গা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছেন দর্শকরা। এরমধ্যে পা পিছলে দুর্ঘটনায়ও পড়তে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা খুরশীদ আলম বলেন, ‘বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এ সড়ক। চলমান সিরিজের দুই ম্যাচে সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে বেশ কয়েকটি রিকশা ও অটো রিকশা। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন দর্শকও।’
আরেক বাসিন্দা স্থানীয় ব্যবসায়ী সেকান্দর বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। বিভিন্ন সময় রাস্তাটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু সড়কটি নির্মাণ বা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনও।’
নগরীর ফিরিঙ্গী বাজার থেকে স্ত্রী এবং সন্তানকে সাথে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন তৌহিদুল। কাদা পানি দেখে রিকশা চালক ভেতরে যেতে রাজি হননি। বাধ্য হয়ে সন্তানকে কাঁধে নিয়ে ভাঙা সড়ক পাড়ি দিচ্ছিলেন। হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘টিকেট কাটার সময় বুঝতে পারিনি, এভাবে ভোগান্তি পেতে হবে। এরকম নোংরা পরিবেশ জানা থাকলে ১০০ টাকা বাড়তি দিয়ে পূর্ব গ্যালারির টিকেট কিনতাম।’ উল্লেখ্য ম্যাচের সর্বনিম্ন ২০০টাকা টিকেটের দর্শকদের প্রবেশের একমাত্র পথ এটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল বলেন, ‘সড়কটি স্টেডিয়াম এলাকার বাইরে। প্রতিটি টুর্নামেন্টের আগে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। সড়কটি সংস্কারের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকেও অবহিত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহেশখাল এবং আউটার রিং রোডের সংযোগ সড়ক ফিডার রোড -৩ এর চলমান উন্নয়নের কারণে সড়কটি অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে।’ এসব উন্নয়ন কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সাগরিকা স্টেডিয়ামসহ পুরো এলাকাটি ১০নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে হলেও শুধুমাত্র এ সড়কটি দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জুর বলেন, ‘স্টেডিয়াম এলাকাটি আমার ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত হলেও পশ্চিম পাশের এ সড়ক ধরে পিছনের এলাকাটি দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের আওতাধীন। তবে সিরিজ শুরুর আগে এ বিষয়ে চসিককে অবহিত করলে জরুরি ভিত্তিতে এটি সংস্কার করে দেয়া যেত।’
সড়ক সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় মহেশখাল সংলগ্ন এ এলাকাটিতে সিডিএ’র উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে এখনও তারা দায়িত্ব হস্তান্তর করে নাই। ফলে সড়কটি সংস্কার কাজ সম্ভব হচ্ছে না।’ দর্শকদের ভোগান্তির বিষয়টি জানালে তিনিও বলেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে এ বিষয়ে জানালে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাস্তাটি চলাচলের উপযুক্ত করে তোলা যেত।’
চলতি বছর এ মাঠে আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান তিনটি সিরিজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবকটি সিরিজেই দর্শকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এ সড়কে। আর তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি স্টেডিয়ামে আগত দর্শকরাও সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
পূর্বকোণ/মাহমুদ