ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত তিন দিন ধরে চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন নগরীর কর্নেল হাটের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও ২২ বছর বয়সী এ তরুণীর উপসর্গ ছিল একেবারেই ভিন্ন। জ্বর দেখা দেয়ার আগেই হঠাৎ তার শরীর অবশ হয়ে যেতে শুরু করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত।
এদিকে, ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আরেক তরুণ অনিক দাস। হঠাৎ জ্বর ওঠছে, ছেড়ে দিচ্ছে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা সঙ্গে বমি আর পাতলা পায়খানা। শরীরও নিস্তেজ হয়ে যায় তার। জ্বরের তাপমাত্রা কম থাকলেও নানা উপসর্গ ভোগাচ্ছিল তাকে।
অনিক কিংবা জান্নাত নয়, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- এ বছর ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে নিত্য নতুন কিছু উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে। যা অতীতে দেখা যায়নি। যার কারণে হঠাৎ করেই অনেক রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতির ঘটনাও ঘটছে। মূলত দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ডেঙ্গু রোগীদের জটিলতা ও মৃত্যুর ঘটনা-দুটোই বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘এবারে চিরচেনা উপসর্গ নয়, নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বেশিরভাগই গুরুতর পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। রোগীদের মধ্যে মাল্টি-অর্গান ডিসফাংশন সিনড্রোম (নানা অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়া) রোগী পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে এ মৌসুমে সন্দেহ হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭২১ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই ১০৭ জন। আর চমেক হাসপাতালে ৩৪ জন এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ভর্তি রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগে ডেঙ্গু আক্রান্তরা চার থেকে পাঁচ দিন কিংবা এক সপ্তাহ পর্যন্ত প্রচণ্ড জ্বরে ভুগতো। বর্তমানে জ্বরের শুরুতেই কিংবা দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ভয়াবহ জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে কারও মধ্যে জ্বর বা অন্য অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকগণ ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘ডেঙ্গু তার চরিত্র বদলেছে। আগের মতো রোগীর শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর দেখা যাচ্ছে না। জ্বরও বেশি দিন থাকছে না। আবার অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে স্বল্প সময়ের মধ্যে। হঠাৎ রক্তচাপ কমে গিয়ে অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এদিকে, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই ডেঙ্গু পরীক্ষার সংখ্যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সপ্তাহখানেক আগেও যেখানে চমেক হাসপাতালে দিনে ২৫ থেকে ৩০ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা হলেও বর্তমানে প্রতিদিন ৬০ জনের অধিক রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা হচ্ছে হাসপাতালটিতে। এছাড়াও বেসরকারি ল্যাবগুলোতেও এ সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। মূলত জ্বর নিয়ে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার কিংবা হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের সিংহভাগই ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়ায় এ সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। তাই জ্বর আসলে কিংবা সন্দেহ হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাটা জরুরি। কেননা শুরুতেই যদি ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়, তাহলে চিকিৎসা প্রদান সহজ হবে। তবে ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে অবশ্যই সকলকে সচেতন হতে হবে।’
পূর্বকোণ/মাহমুদ