চট্টগ্রাম শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায়

তামিম কাঁদলেন, সবাইকে কাঁদালেন

হুমায়ুন কবির কিরণ

৭ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

৯ ফেব্রুয়ারি’০৭ তারিখে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করেছিলেন চট্টগ্রামের খান পরিবারের কনিষ্ঠতম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। ৬ জুলাই’২৩, ঠিক ১৬ বছর ৪ মাস ২৯ দিনের মাথায় প্রিয় ক্রিকেটকে বিদায়ই বলে দিয়ে গুঞ্জনকে সত্য বানিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল খান।

 

গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর জুবলি রোডস্থ একটি হোটেলে মাত্র ১৬ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার কথা জানান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ জুলাই অপ্রত্যাশিত হারের পর সে রাতেই হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তখন থেকেই চারদিকে আলোচনার ঢেউ উঠে।

 

অনেকেই মনে করেছিলেন তামিম হয়তো অধিনায়কত্ব ছাড়বেন। কেউ কেউ আবার শঙ্কায় ছিলেন, টাইগার ওপেনার হয়তো ক্রিকেটই চিরতরে গুছিয়ে ফেলবেন। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। ২০২২ এ টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলার পর অনেকটা অভিমানেই গতকাল টেস্ট এবং ওয়ানডেকেও বিদায় বললেন দেশসেরা ওপেনার।

 

তামিমের অবসরের ঘোষণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠলেও নীরবই ছিল বিসিবি। তবে গতরাত ১০টায় জরুরি বৈঠক শেষে মিডিয়ায় নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায় বোর্ড। সেখানে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন তামিমকে তার অবসরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

নাজমুল হাসান পাপন বলেন, তামিমকে আমি ম্যাসেজ পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত সে আমার ম্যাসেজের উত্তর দেয়নি। আমরা তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করব। আমরা চাই তামিম তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফিরে আসুক। এছাড়া চলমান আফগানিস্তান সিরিজে তামিমের অনুপস্থিতিতে লিটন দাস অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান তিনি।

 

পাপন বলেন, গতকালও (পরশু) তামিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সেখানে সে আমাকে অবসরের বিষয়ে কিছুই বলেনি। আমি তার অবসরের বিষয়ে কিছুই জানি না। তার মতো দায়িত্বশীল খোলোয়াড়ের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাশা করিনি।

 

তিনি আরও বলেন, তামিম আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এজন্য আমরা তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করব। তবে আমরা চাই সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফিরে আসুক। যদি সে ফিরে না আসে তাহলে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

 

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ১৬ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই তামিম বলেন, ‘গতকাল (৫ জুলাই) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক খেলা। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এই মুহূর্তে অবসরের ঘোষণা দিলাম। এই সিদ্ধান্ত আমি হুট করে নেইনি। আমি গত কয়েকদিন থেকে এটা ভাবছিলাম। আমি পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি মনে করি এটাই সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’

 

বাবা ইকবাল খানের স্বপ্ন পূরণ করতেই জাতীয় দলে পা রেখেছিলেন তামিম। ছোট চাচা প্রয়াত আকবর খানের কাছেই হাতেখড়ি ক্রিকেট বলে খেলা শুরু করার। সেই সঙ্গে যাদের কাছে পেয়েছেন ক্রিকেটের পাঠ, তাদের সকলকেই ধন্যবাদ জানান তামিম।

 

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি নিশ্চিত নই, এই ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কিনা। আরও অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর আছে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, আকবর খান। ওনার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তাকে ও তার পরিবারকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে তপনদা নামের একজন কোচ আছেন, যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে অনুশীলন করেছি। তাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

 

সেই সঙ্গে সতীর্থ ও ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার ব্যাটার, ‘যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি (বয়সভিত্তিক, প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশনাল লিগ, জাতীয় দল) খেলেছি, তাদের সকলকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা ছিলেন তাদেরকে। ক্রিকেট বোর্ডকেও অবশ্যই, তারা আমাকে লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল। অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল।’

 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় জানানোর বেশ আগেই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে যান তামিম। ২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। এরপর দেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিলেন।

 

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখান তামিম। ওয়ানডেতে খেলেছেন ২৪১টি ম্যাচ। ৩৬.৬২ গড়ে রান করেছেন ৮ হাজার ৩১৩। পাশাপাশি টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে করেছেন ৫ হাজার ১৩৪ রান। আর ৭৮ টি-টোয়েন্টি খেলে ২৪.০৮ গড়ে ১ হাজার ৭৫৮ রান করে গত বছর অবসর নেন।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন