চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছে তৃণমূল বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর চট্টগ্রামে এই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি। সাংগঠনিক অবস্থা ও কার্যক্রম চোখে না পড়লেও দলটির প্রতীক সোনালি আঁশ নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন দীপক কুমার পালিত। তিনি জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণার মধ্যে হঠাৎ করে বিএনপির প্রয়াত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গড়া তৃণমূল বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
দীপক কুমার পালিত নিজেকে জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির (জেএসপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে পরিচয় দেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটিয়া সংসদীয় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে সবাই স্বাধীনতা পার্টির নেতা হিসেবে চেনে। আমাদের দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের প্রক্রিয়াধীন। এখনো প্রতীক না পাওয়ায় তৃণমূল বিএনপির প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’
জেএসপি ও তৃণমূল বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে দীপক কুমার পালিত বলেন, ‘জেএসপির সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচন করছি। আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। সরকারের বিপক্ষ নই।’ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেএসপি তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. সামসুল আলম, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দীপক কুমার পালিত, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশীদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরমান আলী ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অবস্থান এবং কার্যক্রম রয়েছে চট্টগ্রামে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর হঠাৎ আলোচনা এসেছে তৃণমূল বিএনপি। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এ বিষয়ে পূর্বকোণকে বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি নামে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব চট্টগ্রামে আছে কিনা জানি না। নির্বাচনে বহু দলের অংশগ্রহণ দেখাতে সরকার নিজস্ব লোক দিয়ে তা সৃষ্টি করেছে।’
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, কমিশনের নিবন্ধিত ৪৭টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এরমধ্যে তৃণমূল বিএনপির অবস্থান ৪৫ নম্বরে। চলতি বছরে ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। দলটির প্রতীক সোনালি আঁশ।
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নাজমুল হুদা ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুইবার বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন তিনি। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল চট্টগ্রামের সন্তান আবুল কালাম আজাদ। এরপর তৃণমূল বিএনপি নামে নতুন দল গঠন করেন নাজমুল হুদা।
চট্টগ্রামে দলটি কার্যক্রম বা কমিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। দলটি প্রার্থী দীপক কুমার পালিত এ বিষয়ে বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পেয়েছে বেশি দিন হয়নি। কমিটি থাকতে পারে, তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’ তার নিজের দল জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির সারাদেশে কার্যক্রম রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তৃণমূল বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারে সরকার। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা দাবি করেন, আগামী নির্বাচনে তিনশ আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল বিএনপি।
পূর্বকোণ/এসি