রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক মন্দা ও দেশে চরম ডলার সংকটের মধ্যেও তিন কারণে রাজস্ব আদায়ে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুনাম কুঁড়িয়েছে দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আহরণকারী শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
মূলত, অতীতে জমে থাকা বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি, মামলায় আপিল বিভাগের রায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষে যাওয়া ও অর্থবছরের দুই মাসে বিপুল রাজস্ব আদায়ের কারণেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (২০২২-২৩) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বেশি আদায় সম্ভব হয়েছে। ফলে বিগত অর্থবছরের তুলনায় এবার রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ।
তবে ডলার সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি সংস্থাটি। ডলার সংকটের কারণে গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারেননি আমদানিকারকরা। সংকট নিরসনে একই সময়ে বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ফলে গত অর্থবছরের আগস্ট মাস থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কমতে থাকে রাজস্ব আদায়।
ওই সময় টানা নয় মাস রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম থাকলেও বছর শেষে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় এবার ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
রাজস্ব আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে কাস্টম হাউস। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা কম আদায় করতে পেরেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গেল অর্থবছরের জুলাই এবং সর্বশেষ গত মে মাস ছাড়া আর কোনো মাসেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি কাস্টম হাউস।
জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। ওই মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৪ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। অন্যদিকে আগস্টে ৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।
অক্টোবরে ৬ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৪ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় যথাক্রমে ৫ হাজার ৪৭৯ কোটি ও ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা।
জানুয়ারিতে ৬ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৫ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। মার্চে ৬ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এপ্রিলে ৬ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা।
তবে মে মাসে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। আগস্ট থেকে গত নয় মাসে যেখানে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম হয়েছে, তবে ৪ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মে মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা- যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় এক হাজার ৫৯১ কোটি টাকা বেশি।
সর্বশেষ জুন মাসে রাজস্ব আদায় আবারও কমে যায়। জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়। জুন মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
পূর্বকোণ/এসি