এবারের কোরবানির ঈদে সবার আগে পরিষ্কার হয়েছে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের। ১২ টার আগেই এই ওয়ার্ডের বর্জ্য পরিষ্কার হয়। এর পরেই পরিষ্কার হয়েছে ৩৪, ১৮ এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবর্জনা। সবচেয়ে দেরি হয়েছে ২৪, ৩৫ এবং ১ নম্বর ওয়ার্ড। তবে বিকাল ৩ টার মধ্যেই ৮০ শতাংশ বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে।
ঈদের দিন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য ৮০ শতাংশ অপসারণ করা হয়। বাকি বর্জ্য সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে অপসারণ করা হয়। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ৪ হাজার ৭০০ কর্মী বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। সাড়ে ৩০০ গাড়ি ব্যবহার করা হয়। ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিজেদের ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের কাজ তদারক করেন।
জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম পূর্বকোণকে জানান, কোরবানির ঈদের দিন ৯ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার টন নিয়মিত বর্জ্য এবং ৭ হাজার টন পশু বর্জ্য। দ্বিতীয় দিন ৫ হাজার টন। এর মধ্যে ২ হাজার টন নিয়মিত বর্জ্য এবং ৩ হাজার টন পশু বর্জ্য অপসারণ করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের তথ্যমতে নগরীতে এবার দেড় লক্ষাধিক পশু কোরবানি হয়েছে।
তিনি জানান, চামড়া ব্যবস্থাপনায় কড়া পর্যবেক্ষণ করেছে চসিক। আড়তদাররা যাতে দ্রুত লবণজাত করে তা তদারকিতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়। ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়। ভাউচার দিয়ে পানি ছিটানো হয়।
তিনি জানান, বিকাল ৩টার মধ্যে অন্তত ২০টি ওয়ার্ড এবং সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ৩৮টি ওয়ার্ড পরিষ্কার করা হয়। ৩টি ওয়ার্ডে দেরি হয়। তারমধ্যে রয়েছে ২৪ নম্বর। এটি বড় ওয়ার্ড। প্রতিবছর দেরি হয়। এই ওয়ার্ডে অতিরিক্ত গাড়ি এবং অতিরিক্ত ২০ জন শ্রমিক দেয়া হয়। ৩৫ এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডও কিছুটা দেরি হয়। ৩৫ নম্বরে গাড়ির সংকট ছিল। ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রধান সড়কে পে-লোডার পাঠাতে কিছুটা দেরি হয়। তাই ওই ওয়ার্ডে কিছুটা বিলম্ব হয়।
পলিথিন দেয়ার কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, যেসব এলাকার কোরবানিদাতারা ব্যাগে ভরে আবর্জনা দিয়েছেন সেখানে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সুযোগ ছিল না। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ৬০ হাজার পলিথিন বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে সবাই ব্যাগে ভরে আবর্জনা দেয়নি। অনেকেই ব্যাগগুলো রেখে দিয়েছে। তবে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাগের ব্যবহার বেশ ভালো হয়েছে। ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৯০ শতাংশ কোরবানিদাতা ব্যাগ ব্যবহার করেছে। এই দুই ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের পক্ষ থেকেও পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও ব্যাগের ব্যবহার বেশ ভালো হয়েছে। সবার আগে আবর্জনা পরিষ্কার হয়েছে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের। এখানে কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে ২টি পিকআপ, ১১টি ট্রলি ব্যবহার করা হয়। এর সাথে ছিল সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহকৃত ডাম্প ট্রাক। দ্বিতীয় হয়েছে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড। এরপরে রয়েছে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। বড় ওয়ার্ড হিসেবে ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবর্জনা সাড়ে ৩টার মধ্যে পরিষ্কার করা হয়। এটি বেশ বড় ওয়ার্ড। এছাড়া ২৬ নম্বর ওয়ার্ডও দ্রুত পরিষ্কার করা হয়। মূলত কর্মকর্তা এবং কাউন্সিলররা যেসব ওয়ার্ডে বেশি তৎপর ছিলেন সেসব ওয়ার্ডে দ্রুত কাজ হয়েছে।
কথা রাখেনি চামড়ার আড়তদাররা:
আতুরার ডিপোর চামড়ার আড়তদাররা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রাত ১১টার মধ্যে পশুর লেজ-কান বস্তায় ভরে দ্রুত অপসারণের নির্দেশনা দেয়া হয়। তারাও কথা দেয়। লেজ কান দ্রুত পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। পরে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে তা পরিষ্কার করা হয়। জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা নিজেদের উদ্যোগে ক্যাপাসিটির চেয়ে বেশি চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় কারণে সেখানেও কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তাদের আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। তারা চামড়া লবণজাত করার জন্য মোহাম্মদ আলী নামে একজন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। আড়ৎদার মোহাম্মদ আলীর নিয়োজিত লোকজন ঠিকভাবে পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়। পরে সেখানে সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে লোকবল নিয়োগ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। তিনি জানান, মফস্বল থেকে চামড়া শহরে আনা হলে তা সংরক্ষণের সক্ষমতা আতুরার ডিপোর আড়ৎদারদের নেই। তাই গ্রামের চামড়া গ্রামেই লবণজাত করা উত্তম। তাতে চামড়ার গুণগত মান ঠিক থাকে। শহরের উপরও চাপ কমে।
জানতে চাইলে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলী পূর্বকোণকে জানান, ১২ টার আগেই তার ওয়ার্ড পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রতি পয়েন্টে বক্স স্থাপন করা, সেখানে সিটি কর্পোরেশন নিয়োজিত লোক নিয়োগ হয়। কোরবানিদাতাদের সাথে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট বক্সে পশু বর্জ্য ফেলার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওয়ার্ডবাসী তাতে সাড়া দেয়ায় সফলতা এসেছে। তিনি নিজেই সকাল থেকে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার ওয়ার্ডের সুপারভাইজার জাফরও বেশ পরিশ্রম করেছেন। বলতে গেলে এটা পরিশ্রমের ফসল।
পূর্বকোণ/এসি