কুষ্টিয়া থেকে ২৫টি গরু নিয়ে সাগরিকা বাজারে এসেছেন নওশের চেয়ারম্যান। গত চার দিনে তিনি বিক্রি করেছেন একমাত্র ছোট গরুটি। বাকি ২৪টি গরুর মধ্যে সবগুলোই বড়। একেকটির ওজন ৭ থেকে ১০ মণ। তিনি জানান, গত বছর গরুর মাংশের কেজি ছিল ৬৫০ টাকা। এখন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ দাম বেড়ে গেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে দুই ট্রাকের ৬৫ হাজার টাকা ভাড়া। হাটের ডোগা (খাইন) ভাড়া এবং ৬ জন রাখালের বেতন। তাই গত বছরের তুলনায় গরুর দাম বেড়েছে। হাটে প্রচুর ক্রেতা আছে। দরদাম করছে। বিক্রি শুরু হলে তার গরুগুলো বিক্রি করতে এক ঘণ্টাও লাগবে না এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) এবং কাল বুধবার তার গরু বিক্রি হয়ে যাবে। কারণ চট্টগ্রাম শহরের মানুষ কোরবানির এক-দুইদিন আগে গরু কিনে থাকে। ঈদের তিনদিন আগেও সাগরিকা গরুর বাজারে বেচা-কেনা তেমন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেপারিরা।
বাজারের ব্যবসায়ী আজিজ সওদাগর জানান, এক সপ্তাহ আগে রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০০ গরু এনেছেন। গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র আটটি গরু। ক্রেতারা যে দাম বলছে, তাতে বিক্রি করলে খরচ উঠবে না উল্লেখ করে বলেন, ক্রেতারা বাজার দেখে চলে যাচ্ছেন। আজ (মঙ্গলবার) থেকে বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে।
একই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন কুমিল্লার চান্দিনার আবুল কাশেম। তিনি দুই দিন আগে ৮৭টি গরু এনেছেন। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩টি।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে আসা দুলাল হোসেনের চিত্রও একই রকম। তার ২০টি গরুর মধ্যে বিক্রি হয়েছে একটি।
সাগরিকা বাজারের মামু-ভাগিনার মাঠে বাবু নামের গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা। মাগুরা থেকে আসা গরুর মালিক আবু হাসান বলেন, গরুটির ওজন ৪১ মণ। বাবু ছাড়াও তিনি ১৩টি গরু এনেছেন।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের জে সি এগ্রোর স্বত্বাধিকারী এরশাদ উদ্দিন জানান, দেশি-বিদেশি জাতের ২০টি গরু আনলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ২টি। গরুর বাড়তি দাম নিয়ে তিনি বলেন, গরু লালন-পালনে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পশু খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে গরুর দামও বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। সাধারণ মানুষ পশু খাদ্যের দামের বিষয়ে খবর রাখে না। তাই গতবারের বাজেটে গরু কিনতে এসে কিনতে পারছেন না।
২৮ মণ ওজনের কালোমানিককে মাগুরা থেকে এনেছেন সোহেল। বিবিরহাট গরুর বাজারে কৌতূহলী মানুষ আর শিশু-কিশোরদের ভিড় লেগেই আছে কালোমানিকের পাশে। কালোমানিকের দাম হাঁকা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। গরুর মালিক জানান, পাঁচ বছর বয়সী ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুটি গতকাল (সোমবার) এনেছেন মাগুরা থেকে। আরও দুই গৃহস্থের সঙ্গে এক ট্রাকে তিনটি বড় গরু এনেছেন তারা। ভাড়া নিয়েছে ৩২ হাজার। প্রতি বছর এ হাটে বড় গরু নিয়ে আসেন তিনি। আমান বাজারের ওয়ালী সওদাগরের বাড়ির একটি খামার থেকে আনা হয়েছে ১০ মণের একটি গরু। বিক্রেতা দাম হাঁকছেন তিন লাখ আশি হাজার।
মোহাম্মদ আবদুল মালেক কুষ্টিয়া থেকে এনেছেন ১০টি বড় গরু। সবচেয়ে বড় গরুটির দাম সাত লাখ টাকা হেঁকেছেন। তিনি বলেন, ভুষির কেজি ৬৫-৭০ টাকা। কাঁচা ঘাসের দাম, খড়ের দাম, ওষুধের দাম ও শ্রমিকের দাম বেশি এবার। সেই হিসাবে গরুর দাম বেশি না।
বিবিরহাট বাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, ইজারাদার না থাকায় এবার খাস কালেকশনের মাধ্যমে স্থায়ী এ পশুর হাট পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এস্টেট বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় হাসিল তোলা হচ্ছে। এ হাটে এবার গরুর সংখ্যা তুলনামূলক কম।
চসিকের ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বলেন, বিবিরহাটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম গরু উঠেছে এবার। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের জন্য মুরাদপুর মোড়ে সড়ক বন্ধ থাকায় গত বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিবিরহাট ইজারা নেয়নি কেউ। তাই খাস কালেকশন চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাগরিকা গরুর বাজার ছাড়াও অন্য স্থায়ী এবং অস্থায়ী বাজারগুলোতেও একই চিত্র। দরদাম এবং দেখাদেখির মধ্যেই সময় পার হয়েছে গত ২০ জুন থেকে চালু হওয়া হাটগুলোর ক্রেতা-বিক্রেতাদের। তালিকাভুক্ত বাজারগুলো ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় অনেকে গরু কিনে এনে বিক্রি করছেন। আবার অনেকে খামার থেকেও গরু বিক্রি করছেন।
পূর্বকোণ/পিআর