তিন বছর আগে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টমসে ঘটা করে চালু করা হয়েছিল অনলাইন ভিত্তিক ই-অকশন কার্যক্রম। মূলত নিলাম ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে চালু হয়েছিল ই-অকশন। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে গত তিন বছরে ই-অকশন হয়েছে মাত্র পাঁচটি। এছাড়া গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ৯ মাসে অনুষ্ঠিত হয়নি একটিও ই-অকশন। তবে কি কেবল নামেই রয়ে গেল ই-অকশন? এমন প্রশ্ন নিলামে অংশগ্রহণকারী বিডারদের।
চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রায় প্রতি মাসেই ২/৩টি সাধারণ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে গতানুগতিক কাগজের নিলামের দরপত্র ক্রয় করে হাতে লেখা সেই নিলামের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়। অথচ অনলাইন ভিত্তিক যে সুদূর প্রসারী চিন্তা করে ই-অকশন চালু করা হয়েছিল তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের ই-অকশন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উদ্বোধনের পর ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবরের প্রথম ই-অকশনের লট ছিল ১৬টি। সেই ১৬ লটের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিকস, স্ক্র্যাপ, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, খেজুর, আদা, সোডা অ্যাশ, আয়রন পাইপ ইত্যাদি। পরবর্তী ই-অকশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। সেই নিলামে ২০ লটের সবগুলোতেই ছিল পেঁয়াজ। এর পরের তিনটি ই-অকশনই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিলাসবহুল কার্নেট গাড়ির। ২০২১ নভেম্বরের ৪ তারিখের ই-অকশন ১১২টি লটে ১১২টি বিলাস বহুল কার্নেট গাড়ির নিলামে তোলা হয়েছিল। এর পরে গত বছরের (২০২২) ১৩ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত কার্নেট গাড়ির ই-নিলামে ১০৮টি গাড়ি রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কার্নেট গাড়ির ই-অকশনে ছিল ৭৮টি গাড়ি। এর পরে গত ৯ মাসে আর ই-অকশন হয়নি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে।
এদিকে ই-অকশন কার্যক্রম নিয়মিত না হওয়ার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, ই-অকশনের সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যায়নি কয়েকটি কারণে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিয়মিত যারা প্রচলিত নিলামে অংশগ্রহণ করেন তারা অনলাইনে এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়া অনলাইনে নিলামে অংশগ্রহণ করলেও বিডারদের জামানত জমা ও ব্যাংকিং কাজে নিলাম শাখায় আসতে হয়। এর বাইরে অন্যতম কারণ হলো, যদিও অনলাইন নিলামে পণ্যের ছবি দেওয়া হয়, তারপরও কেউই চায়না একটি পণ্য না দেখে কিনতে। এটি একটি সাধারণ বিষয়। উচ্চমূল্য দিয়ে কেউ পণ্য কিনতে আসলে সে নিজ চোখে না দেখে কেউই কিনতে চাইবে না। এসব কারণে ই-অকশন এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
তারা আরো জানান, ই-অকশনের সুফল পেতে এই কার্যক্রমের দেশব্যাপী প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজন আছে। এই পদ্বতিতে যে কোনো স্থান থেকেই আগ্রহীরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। ফলে একদিকে সময় বাঁচবে সময়, অন্যদিকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
উল্লেখ্য, ই-অকশন প্রক্রিয়ায় নিলামে অংশগ্রহণকারীরা পণ্যের দর, তালিকা, পণ্যের ছবি দেখতে পায়। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পূরণ করে ঘরে বসেই নিলামে অংশ নেয়া যায়। একইভাবে ঘরে বসেই দেখতে পারবেন, কোন ক্যাটালগের সর্বোচ্চ বিডার কে হয়েছেন। এতে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নিলাম কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
প্রসঙ্গত, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে আমদানিকারককে নোটিশ দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এর ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টম। এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণা এবং ঘোষণার বেশি আনা জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। আবার মামলাসহ নানা জটিলতায় বন্দর ইয়ার্ডে বাড়ে কনটেইনারের সারি। তৈরি হয় কনটেইনার জট। দিনের পর দিন কনটেইনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ পায় না।
পূর্বকোণ/পিআর