কোরবানির পশুর হাটে টাকা লেনদেনে সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য রোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তায় কাজ করবে ১০ প্রতিষ্ঠান। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়েছে, রেল লাইন সংলগ্ন এলাকায় পশুর হাট না বসানো, প্রত্যেক পশুর হাটে উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও খুঁটি বাণিজ্যের বিষয়ে কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো হাটে পশু বহনকারী ট্রাক জোরপূর্বক না নামানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে সকল কাজ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে।
নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, কোরবানির পশুর হাটের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগর পুলিশ ছাড়াও কাজ করবে জেলা প্রশাসক, বিদ্যুৎ বিভাগ, ওয়াসা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ব্যাংক/তফসিলি ব্যাংক। এছাড়াও ইজারাদার সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবেন। পরিচিতি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাখা হবে। স্বেচ্ছাসেবকগণ স্থানীয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, পশুর হাটে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে মাঠে থাকবেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন তারা। কোরবানির পশুর হাটে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখার জন্য কাজ করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করবে ওয়াসা। প্রত্যেক পশুরহাটে ভেটেরিনারি ডাক্তারসহ কন্ট্রোলরুম স্থাপন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য বিভাগ অস্থায়ী হেল্ধসঢ়;থ ক্যাম্প স্থাপন করবে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় জনবলসহ প্রস্তুত থাকবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে। পশুর হাট ও মোবাইল টহলে থাকবে পুলিশ। এছাড়াও র্যাবের বোমা ডিসপোজেল টিম প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুত থাকবে।
নগরের পশুর বর্জ্য অপসারণ ও রাস্তা-ঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করবে সিটি করপোরেশন। এছাড়াও নির্ধারিত হাসিলের বাইরে যেন অতিরিক্ত হাসিল আদায় করতে না পারে সেজন্য সিটি কর্পোরেশন নিশ্চিত করবে। হাসিলের হার বোর্ড/ ব্যানারের মাধ্যমে প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পশুর হাটে শুরু থেকে ঈদের পূর্ব রাত পর্যন্ত জালনোট সনাক্তকরণ বুথ, অস্থায়ী ব্যাংকিং বুথ স্থাপন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও পশুর হাটে ব্যাংকের বুথে টাকা জমা ও সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পশুর হাটে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের নাম ও পদবিসহ সংশ্লিষ্ট থানার কন্ট্রোলরুমে প্রেরণ করতে হবে। হাট ইজারাদারের পশুর হাট যাতে রাস্তা পর্যন্ত বর্ধিত হয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি না করে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্ধারিত হাসিলের অতিরিক্ত টাকা যাতে কেউ আদায় না করে সে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
জনসাধারণ যাতে অজ্ঞান পার্টি, থুথু পার্টি, সালাম পার্টি, টানা পার্টি, মলম পার্টি, গামছা পার্টি ও টিস্যু পার্টির কবলে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, মানসম্মত খাবার হোটেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব খাবারের দোকান হোটেলের মালিকদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশদের জমা দিতে হবে। বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট সময় পরপর অজ্ঞান বা মলম পার্টির দৌরাত্মের ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে। পশুর ট্রাক যে হাটে যাবে সে হাটের নাম সম্বলিত ব্যানার ট্রাকের সামনে টানাতে হবে। অনুমোদিত হাট ছাড়া অন্য কোনো স্থানে পশুর হাট বসানো যাবে না। পশুবাহী খালি ট্রাক ফেরত যাওয়ার সময় যাত্রী পরিবহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
পূর্বকোণ/এসি