বাসা ভাড়ার নেওয়ার কথা বলে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর বার্লিংটন মোড় এলাকার একটি বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে ও চুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনাস্থলে মা এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মেয়ে মারা যায়। নিহত নুরনাহার (৪৫) ও ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তি (১৬) বাসার মালিক ফজলে আজিম কচির স্ত্রী ও মেয়ে।
বুধবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আলতাফ হোসেন (৩২) নামের এক যুবককে আটক করে স্থানীয় দোকানিরা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঘটনার সময় বাসার মালিক ফজলে আজিম কচি ও তার একমাত্র ছেলে বাসার বাহিরে ছিলেন। প্রিয়ন্তি শহরের হরিনারায়ণপুর হাই স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
মুহূর্তে হৃদয়বিদারক এই ঘটনার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে ওই বাসার সামনে শত শত লোকের ভিড় জমে। এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, মুর্তাহিন বিল্লাহসহ থানা ও ডিবির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ দুপুরে ওই বাসা থেকে নিহত নুর নাহারের লাশ উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। বর্তমানে ওই বাসার সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মমতাজ ফার্মেসির মালিক আমিন উল্যা জানান, তার ফার্মেসি ও বাসার পাশে একটি টয়লেটে যান তিনি। এসময় ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় নারীর চিৎকার শুনে তিনি সিঁড়ি উঠার সময় দেখেন মেয়ে আহত অবস্থায় সিঁড়ির পাশে একটি রুমে পড়ে আছেন। এসময় এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ধরলে, সে পালিয়ে যাওয়ার কালে অন্য দোকানিরা এগিয়ে এসে তাকে ধরে ফেলে।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে মা মারা যান ও মেয়েকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। তিনি আরও জানান, আটক আলতাফ হোসেনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে এবং সে বাসা ভাড়া নিতে এসেছে বলে জানায়।
নিহত নুর নাহারের স্বামী ফজলে আজিম কচি জানান, তিনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান। পরে সাড়ে ১০টার দিকে তিনি জানতে পারেন তার বাসায় ডাকাত ঢুকেছে। দ্রুত তিনি বাসায় এসে স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এবং জানতে পারেন হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মেয়ে মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, তার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। গতকাল মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি বাসা ভাড়া নিতে এসেছিলেন। তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। তাকে পরে আসতে বলা হয়েছিল। তিনি সন্দেহ করেন ওই ব্যক্তিসহ তার লোকজন ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে ভাড়াটিয়া সেজে বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
কী কারণে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা পরিবারের লোকজনও বলতে পারছেন না। ঘটনাটি রহস্যজনক। তবে আটককৃত ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রহস্য উদঘাটনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সুধারাম মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, মা মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আলতাফ হোসেন নামে একজনকে স্থানীয়রা আটক করেছেন। পরে তাঁকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে।
পূর্বকোণ/এএইচ