আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় আসার প্রায় দুই বছর হতে চলল। তালেবান ও প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সরকারের মধ্যকার সুসম্পর্ক এরই মধ্যে তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) সন্ত্রাসী হামলাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আফগান তালেবানের সঙ্গে তলে তলে সুসম্পর্ক রাখা তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র পাকিস্তান এখনকার তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বেশ বেকায়দায়। তাদের সুসম্পর্কে তৈরি হয়েছে তিক্ততা। খবর: ব্লুমবার্গ
কিছু তালেবান নেতা পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক চাইছে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।
২০২১ সালে তালেবান দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা পাওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পরে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর প্রধান লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ফাইজ হামিদকে কাবুলের বিলাসবহুল একটি হোটেলে আয়েশি ভঙ্গিতে চা পান করতে দেখা যায়। সদ্য ক্ষমতায় বসা তালেবান নেতাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় ছিলেন তিনি।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালেবানকে পাকিস্তান যতটা শক্তিসমর্থন জুগিয়েছিল, তাতে আইসএসআই প্রধান ফাইজ হামিদ হয়তো তখন এতসবের প্রতিদান পাওয়ার কথাই ভাবছিলেন। কিন্তু বছর দুয়েকের ব্যবধানে তালেবান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে।
পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও তাতিয়ে তুলেছে। চরম মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে পাকিস্তানের জনজীবন টালমাটাল, অনেকটা দেওলিয়া হওয়ার পর্যায়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের ওপর দমনপীড়ন চলছে, সামরিক বাহিনীও সরকারকে এ ক্ষেত্রে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, পাকিস্তান সরকার মনে করেছিল, আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান ও পাকিস্তানের টিটিপির মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে এবং তালেবান চাইলে টিটিপিকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি দুই দেশের দুই তালেবানের মধ্যে একটা শক্ত যোগাযোগও রয়েছে বলে মনে করে পাকিস্তান। কিন্তু এতদিনে তেমন ধারণার প্রতিফলন পায়নি পাকিস্তান সরকার।
আফগান তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার পক্ষে। নিজেদের স্বাধীনতার চিত্র পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতে তারা এই দূরত্ব মেনে চলতে চায়। এর মধ্যে তালেবান সরকারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার এবং তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমরের ছেলে ও বর্তমান আফগান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব আছেন। দীর্ঘদিন পাকিস্তানের জেলে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে আব্দুল গনি বারাদারের। আর মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেছেন। ভারত সরকারকে তালেবান সদস্যদের প্রশিক্ষণে সহায়তার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। খোদ সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাও এর আগে বলেন, পাকিস্তানের সরকার ‘অনৈসলামিক’ এবং ব্রিটিশ উপনিবেশিক আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
পূর্বকোণ/এএ