বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ডা. আফছারুল আমীন এমপির দ্বিতীয় নামাজে জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। শনিবার (৩ জুন) বাদ আছর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা সম্পন্ন হয়।
এ সময় দলমত নির্বিশেষে হাজারো শোকার্ত মানুষ এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়াত জননেতার মরদেহে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এর আগে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। বাদ এশা তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরবিদায় নেন এই বর্ষীয়ান নেতা।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারযোগে ডা. আফছারুল আমীনের মরদেহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে।
চট্টগ্রামে মরদেহ গ্রহণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রসাশক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি দক্ষিণ কাট্টলীর বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে মরদেহ আসরের নামাজের সময় জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আনা হয়।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত শোকার্ত মানুষের উদ্দেশ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, প্রয়াত জননেতা ডা. আফসারুল আমীন মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং সংগঠনের প্রথম সারির নেতা হিসেবে মানুষকে যে সেবা প্রদান করে গেছেন তা স্মৃতিতে সমুজ্জল হয়ে থাকবে। তিনি জীবনে বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে যে স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তা চমকপ্রদ। দলের আদর্শ ও নীতি নৈতিকতার প্রতি আস্থাশীল জননেতা ডা. আফছারুল আমীন সকলের কাছে সম্মানিত ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামেও সম্মুখভাগে ছিলেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন প্রয়াত জননেতা ডা. আফছারুল আমীনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, একটা মানুষের ভালো-মন্দ দুটো দিকই থাকে। একজন মানুষ হিসেবে কেউই নিজেকে শতভাগ সফল ও সার্থক ভাবতে পারেন না। সবকিছু আল্লাহ তায়ালা একজন মানুষের মূল্যায়ন ও বিচার করবেন। ডা. আফছারুল আমীন এখন না ফেরার দেশে। তাই তিনি এখন সবকিছুর উর্ধ্বে। তিনি যে ভালো কাজ এবং ভালোবাসা জনগণের জন্য রেখে গেছেন তাকে অনুসরণ ও অন্তরে ধারণ করে আমাদের স্মৃতিতে স্মরণে তাকে জাগিয়ে রাখতে হবে।
এর আগে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ডা. মো. আফছারুল আমীনের ছোটভাই ডা. এরশাদুল আমীন ও ছেলে ফয়সাল আমীন।
পরে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার মসজিদের পেশ ঈমাম মাওলানা আনিসুজ্জামানের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় শরীক হন হুইপ সামশুল হক এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, এড. নজরুল ইসলাম এমপি, নোমান আল মাহমুদ এমপি, আশিকুল্লাহ রফিক এমপি, এম.এ লতিফ এমপি, দিদারুল আলম এমপি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উত্তর জেলার আবুল কালাম আজাদ, এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, জসীম উদ্দীন বাবুল, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন, সফর আলী, শেখ মো. ইছহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মসিউর রহমান চৌধুরী, মো. হোসেন, মাহবুবুল হক মিয়া, আবু তাহের, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম, দক্ষিণ জেলার প্রদীপ দাশ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, কামরুল হাসান বুলু, বখতেয়ার উদ্দীন খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, জাফর আলম চৌধুরী, মহব্বত আলী খান, আব্দুল লতিফ টিপু, মো. ইলিয়াছ, ড. নেছার উদ্দীন আহমদ মঞ্জু, বেলাল আহমদ, মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিট ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ, নাগরিক উদ্যোগ চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
প্রথম নামাজে জানাজা: শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় ডা. আফছারুল আমীনের প্রথম জানাজা ঢাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অফিস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন মন্ত্রিপরষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। পরে ডা. আফছারুল আমিনের মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের সামরিক সচিব শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা জানানো হয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকেও। এছাড়া ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুসহ চিফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আফছারুল আমিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় জাতীয় ও দলীয় পতাকা দিয়ে মরহুমের দেহ ঢেকে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
তৃতীয় নামাজে জানাজা: বাদ এশা পিএইচ আমীন একাডেমি মাঠে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে দক্ষিণ কাট্টলিতে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। তার আগে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন আফছারুল আমীন। সর্বশেষ রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই সন্তানসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার (২ জুন) বিকাল ৪ টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ