চট্টগ্রাম রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফিস দিয়ে আফছার ভাইকে দেখানোর কথা ভাবতেই পারতেন না স্থানীয় রোগীরা

ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন

৩ জুন, ২০২৩ | ৫:১৯ অপরাহ্ণ

আফছার ভাই ছিলেন আমার বড় ভাই মোরশেদ উদ্দিনের স্কুলের বন্ধু। একসাথে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। আফসার ভাইয়ের বাবা ডা. ফজলুল আমিন ছিলেন চট্টগ্রামের একজন নামকরা প্রাইভেট প্রাকটিশনার। উনার চেম্বার ছিল দেওয়ান হাটের মোড়ে। আমজনতা উনাকে ডা. ফজল আমিন নামে চিনতেন। উনার চেম্বারে অর্ধেক রোগী কোন ফিস দিতেন না। ডা. ফজল আমিনের মিক্সার খুবই জনপ্রিয় ও কার্যকরী ছিল। এখনকার জমানায় কোন ডাক্তার মিক্সার দিয়ে চিকিৎসা করেন না। আফসার ভাই ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। উনারা ছিলেন সিএমসির ১৪তম ব্যাচ। এমবিবিএস পাস করার পর আফসার ভাই দেওয়ান হাটে উনার বাবার চেম্বারে প্রাকটিস শুরু করেন। বড় ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে আমাদের পরিবারের সবারই ফিজিশিয়ান ছিলেন আফসার ভাই। উনার কাছে যতবারই গিয়েছি ততবারই কিছু ওষুধও দিয়ে দিতেন। ফিস নেওয়ার তো প্রশ্নই ছিল না।

 

দেওয়ান হাটের আসে-পাশের স্থানীয় রোগীরা বিশেষ করে মহিলা রোগীরা উনার কাছে এক ধরনের দাবি নিয়ে দেখাতে আসতেন। উনারা কখনো ভাবতেই পারতেন না যে ডা. আফসারুল আমিনকে ফিস দিয়ে দেখাতে হবে। অনেক বয়স্ক মহিলা আফসার ভাইকে তুমি করে সম্বোধন করতেন। ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে যে একটি আন্তরিক সম্পর্ক থাকে তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ ছিলেন ডা. ফজল আমিন ও ডা. আফসারুল আমিন। রোগী উনাদের কাছে এসে একটা আস্থা পেতেন। যা এখনকার অনেক ডাক্তারের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

 

আমি যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই তখন আফসার ভাই খুব খুশি হয়েছিলেন। উনার বাবার ফিস ছিল ১ টাকা ৫০ পয়সা অথবা ২ টাকা। আফসার ভাইয়ের নানা ছিলেন এলএমএফ ডাক্তার। নাম ছিল ডাক্তার ফরিদ। উনার বাড়ি রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের দারোগা বাড়িতে। আমাদের নানার বাড়িও সুলতানপুর হওয়াতে ডা. ফজল আমিন আমার মাকে দেখে কোন ফিস নিতেন না।

 

আফসার ভাই প্রাইভেট প্রাকটিসের সাথে সাথে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। মেডিকেল কলেজে আসলেই আমার সাথে মাঝে মাঝে উনার সাথে দেখা সাক্ষাত হত।

 

১৯৮৯ সালে আমি তখন আইএএইচএস (বর্তমান ইউএসটিসি) এ এনাটমি বিভাগের শিক্ষক হিসাবে সবেমাত্র যোগদান করেছি। আফসার ভাই উনার ছোট ভাই আরিফুল আমিনকে ভর্তি করালেন জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে। আফসার ভাই আমাকে দেখে বলেছিলেন ‘ইবারে দি গেলাম, খেয়াল রাখিবা’।

 

ডা. আরিফুল আমিন পরবর্তীতে এমবিবিএস পাস করে স্কিন স্পেশালিস্ট হিসাবে সেই দেওয়ান হাটের চেম্বারেই প্রাক্টিস শুরু করেন।

 

আফসার ভাইয়ের আওয়ামী রাজনীতির পুরস্কার ছিল মন্ত্রী হিসাবে সরকারে থাকা। এলাকায় অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। উনার অসুস্থতায় সব সময় যোগাযোগ ছিল ডা. আরিফুল আমিনের সাথে। আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসীব করুক এবং উনার পরিবারকে এই শোক সহ্য করার ক্ষমতা দিক।

লেখকঃ  ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, কানাডা। ২৪ তম ব্যাচ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট