বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তায় নতুন করে ঘাটতির সম্মুখীন হওয়ায় অবিলম্বে তহবিল বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য আবেদন করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার (১ জুন) থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক খাদ্য ভাউচার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কমছে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদে দৈনিক রেশনের ৩৩ শতাংশ হ্রাস পাবে।
শিবিরের রোহিঙ্গাদের প্রত্যেককে, মাত্র ৮ ডলার (৮৪০ টাকা) সমমূল্যের ফুড ভাউচার দেয়া হবে প্রতি মাসে। এটাই তাদের জীবনধারণের একমাত্র উপায়, তাদের আর কেনো বিকল্প নেই।
রোহিঙ্গা পরিবারের মা-বাবারা ইতোমধ্যে কম খাচ্ছেন, যাতে তাদের সন্তানেরা খেতে পায়। খাদ্য সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর জীবনে রেশনের কাটছাঁট প্রভাব ফেলবে। এদের জীবনধারণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই।
চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে মাথাপিছু মাসিক ১২ ডলার মূল্যমানের রেশন পাচ্ছিলেন; যা দিয়ে কেবল তাদের দৈনিক চাহিদা মিটতো। অর্থায়নের অভাবে ১ মার্চ থেকে তাদের মাথাপিছু মাসিক রেশন কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। এখন থেকে তা হবে ৮ ডলার মূল্যমানের।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য হ্রাস করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য কমাতে বাধ্য হচ্ছে। শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। নারী, শিশু ও সবচেয়ে নাজুক মানুষ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায়, তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, খাদ্য ও শিক্ষার জন্য মোট যে পরিমাণ অর্থ দরকার, তার মাত্র ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থায়ন মিলেছে। এই শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতার আর কোনো উৎস নেই। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বসবাসরত মানুষের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের ওপর।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন-রক্ষাকারী সহায়তায়, এই নতুন কাটছাঁটের উদ্যোগ নেয়া হলো এমন এক সময়, যখন তারা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব আর সেই সঙ্গে তাদের শিবিরগুলোতে এই বছরের বিরাট এক অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন; এখন হাজার হাজার শরণার্থীর সাহায্য ভীষণ প্রয়োজন।”
চলতি বছর, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা বিশেষভাবে নাজুক। কারণ, ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার সাহায্যের যে আবেদন ২০২৩ সালে করা হয়েছে; ১ জুন নাগাদ তার মাত্র ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থায়ন মিলেছে। এর ফলে অন্যান্য জরুরি কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডে কাটছাঁট করা হচ্ছে।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ