ধ্বংস করার পর মাটিতে পুঁতে ফেলা পণ্য উত্তোলন করে বাজারজাত করার অপরাধে মামলার আসামি করা হয় আবদুল মান্নানকে। এজন্যে কারাভোগও করেন। কিন্তু বিন্দুমাত্র সংশোধন হননি তিনি। পুঁতে ফেলা নিষিদ্ধ পণ্য তোলার অপরাধে কাস্টমসের দায়ের করা মামলায় জামিন নিয়ে পাঁচ মাসের মাথায় ফের ধ্বংস করা পণ্য মাটির নিচ থেকে তুলেন তিনি।
আবদুল মান্নান কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যার হামদু মিয়ার বাড়ির মো. ইব্রাহিমের ছেলে। যে জমিতে কাস্টমস ধ্বংস করা পণ্য পুঁতে রাখে সেই জমিও ভাড়া নিয়েছেন আবদুল মান্নান নিজেই।
গত বছরের ৮ নভেম্বর আনন্দবাজার বেড়িবাঁধ এলাকার সিটি কর্পোরেশনে ডাম্পিং ইয়ার্ড এলাকায় মাটিতে পুঁতে রাখা পণ্য তুলে নেয়ার সময় ছয়টি এক্সকেবেটর, ১৪টি ডাম্পিং ট্রাক ও একটি পে লোডার জব্দ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান মান্নান ও নুরুল কবির। এ ব্যাপারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে চুরির অপরাধে বন্দর থানায় দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে।
জামিন নেয়ার পর গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে ফের পুঁতে ফেলা পণ্য তুলছিলেন মান্নান। এসময় বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মান্নানের শ্যালকসহ পাঁচজনকে আটক করে। মান্নানসহ ছয়জনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন বন্দর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফয়সাল সারোয়ার।
প্রথমবারের (৮ নভেম্বর ২০২২) ঘটনায় চুরির অপরাধে দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদলত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন নেন মান্নান ও নুরুল কবির। পরবর্তীতে গত ১১ জানুয়ারি জামিন নিতে গেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দুইজনকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, পণ্য ধ্বংস করে মাটিতে পুঁতে ফেলার পর জমিটির দায়ভার সম্পূর্ণরূপে আসামিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ধ্বংসকৃত ৪২০ কন্টেইনার মালামাল উত্তোলনে আসামিরা দায় এড়াতে পারে না। এ মামলাটি একটি চুরির মামলা হলেও এটি স্বাভাবিক চুরির মামলা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ নেই। ধ্বংস করা পণ্য নিশ্চিতভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তা বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে উত্তোলন করা হচ্ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। ৪২০ কন্টেইনার মালামাল বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে উত্তোলন করে সরানোর জন্য ১৪টি ডাম্পিং ট্রাকের ব্যবস্থা রাখা এবং ১৪টি মধ্যে আটটি ডাম্পিং ট্রাকে লোড করে বড় ধরনের চুরির চেষ্টা করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুরুতর।
আমদানি-নিষিদ্ধ, নষ্ট, পঁচা ও দুর্গন্ধযুগ্ধ ৩৮২ কন্টেইনার ডালিম, আপেল ও পিঁয়াজ ধ্বংস করার পর নিয়ম অনুযায়ী মাটিতে পুঁতে ফেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হালিশহর ডাম্পিং ইয়ার্ড, বে-টার্মিনালের সম্মুখে, বেড়িবাঁধ রোড এলাকায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিন ধরে ৩৮২ কন্টেইনারে নয় হাজার ১৩১ মেট্রিক টন পণ্য ধ্বংস করার পর পুঁতে ফেলা হয়। প্রায় আটমাসের মাথায় ধ্বংস করা নিষিদ্ধ পণ্য গভীর রাতে মাটির নিচ থেকে তুলে ট্রাকে নিয়ে যাবার সময় গত ১০ এপ্রিল ধরা পড়ে বন্দর থানা পুলিশের হাতে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন মান্নানের শ্যালক নজরুল ইসলাম লিটন, ডাম্পিং ইয়ার্ডের প্রহরী সুজন কান্তি দে, মালামাল লোড আনলোডের দায়িত্বে থাকা গিয়াস উদ্দিন ও ইউসুফ এবং পিকআপ চালক আশরাফ ইসলাম রনি। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, ধ্বংসকরা পণ্য পুঁতে রাখার জমি জমিটি আবদুল মান্নান প্রথমে ভাড়া নিয়ে পরে তা কাস্টমসকে ভাড়া দিয়েছেন।
মূলত পুঁতে ফেলার কিছুদিন পর রাতের অন্ধকারে পচা-গলা পণ্যগুলো তুলে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির ফ্যাক্টরিতে সরবরাহ করা হয়। পরে মাছ-মুরগির খাবার হিসাবে তা বাজারজাত করা হয়। জানা যায়, এ ধরনের পণ্য ধ্বংস করার পর মাটিতে পুঁতে ফেলতে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বিজিবি, ট্রাফিক পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর, কাস্টমসের চার বিভাগের চারজন, সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের একজন করে ১২ সদস্যের একটি ধ্বংস কমিটি রয়েছে। কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধ্বংস করার পর পণ্যগুলো পুঁতে ফেলা হয়। পরবর্তীতে এসব পণ্য মাটির নিচ থেকে তোলার সুবিধার্থে পণ্য ধ্বংসের জমিগুলো ভাড়া নিয়েছেন আবদুল মান্নান নিজেই।
পূর্বকোণ/পিআর