নিজের অজান্তেই দিনে ৫০টি সিগারেটের সমান নিকোটিন শোষণ করেন একজন তামাক চাষী। ফলে টোব্যাকো সিকনেস নামে নিকোটিন বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন তামাক চাষী। শরীর, ব্যবহৃত জামা ও জুতার সাথে বিষাক্ত উপাদান বাড়িতে চলে আসায় শুধু তামাক চাষী একা নন- তার পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এসব রোগে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা’র গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা জানিয়েছেন- তামাক পাতা নড়াচাড়ার সময় ত্বকের মাধ্যমে নিকোটিন শোষিত হয়। এই কারণে টোব্যাকো সিকনেস নামে নিকোটিন বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগ দেখা দেয়। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে- বমি বমি ভাব, বমি, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। শিশুদের দৈহিক ওজন কম থাকায় ত্বকের মাধ্যমে নিকোটিন শোষিত হলে তারা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে থাকে।
কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ অনুযায়ী দেশের ৯৯,৬০০ একর জমিতে ৮৯,০০০ মেট্রিক টন তামাক চাষ হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪,৯২১ একর জমিতে ৪৭,২০৯ মে. টন তামাক চাষ হয় খুলনায়। এছাড়া রংপুরের ৩৮,১৯৫ একর জমিতে ৩০,৩৪৮ মে. টন, চট্টগ্রামের ১০,৪১৬ একর জমিতে ৬,৫৪৩ মে. টন, ঢাকার ৫,৯০৯ একর জমিতে ৪৮১২ মে. টন তামাক চাষ হয়। ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে অল্প হলেও সিলেট ও বরিশালে তামাক চাষ হয় না।
‘প্রজ্ঞা’র মিডিয়া ম্যানেজার মেহেদী হাসান পূর্বকোণকে বলেন, ২০২১ মৌসুমে বোরো, গম এবং আলুর একরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১,৬৮১ কেজি, ১,৩৩৫ কেজি এবং ৮,৫৩৮ কেজি। ওই মৌসুমে দেশে তামাক চাষ হয় প্রায় ১ লাখ একর জমিতে। তামাকের পরিবর্তে সেখানে বোরো চাষ করা হলে ১,৬৭,৪২৮ মে. টন বোরো, গম চাষ করা হলে ১,৩২,৯৬৬ মে. টন গম, আলু চাষ করা হলে ৮,৫০,৩৮৭ মে. টন আলু উৎপাদন করা যেতো।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তামাকের মত একটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী ফসল উৎপাদনের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য হারানোর ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তামাক চাষ ও বিক্রিকে নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত ও তামাকের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা প্রয়োজন।
তামাক চাষ ও তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগের কারণ সিগারেট-তামাক গ্রহণ। এটি গ্রহণ না করলে অনেক কঠিন রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
পূর্বকোণ/পিআর