চট্টগ্রাম রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

যাদের জন্য প্রকল্প অসন্তুষ্ট তারাই

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৬ মে, ২০২৩ | ১:১১ অপরাহ্ণ

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসন-সেচ প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই ফসলি জমি ধ্বংস ও জোর করে মাটি কেটে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রিট পিটিশন, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তদারকি ও ঠিকাদারদের জবরদস্তির কারণে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দেয়। বিশেষ করে কৃষকদের ফসলি জমি কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং খাল খনন নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ফসলের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ফসলি জমি কেটে নেওয়ায় কৃষক এবং ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাকবিতণ্ডা হয়। বিরোধ নিরসনে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতা হয়। এরপরও ফসলি জমি কেটেই শুরু হয় বাঁধের কাজ। বড়লিয়া ইউনিয়নের বেলখাইন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরুলুটার খান পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণে তার ৭ গণ্ডা জমি জোর করে কেটে ফেলা হয়েছে। গাছপালা ও ক্ষেত নষ্ট করা হয়েছে। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আদেশ দেন আদালত। ৬ মার্চ জেলা প্রশাসক শুনানি করে মাটি রাখার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এখনো সেই নির্দেশনা মেনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, খাল কেটে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ার কারণে লবণপানি ঢুকে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দিদারুল ইসলাম বলেন, বড়লিয়া এলাকায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গণ্ডাপ্রতি ২-৩ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন ঠিকাদারের লোকজন। ফসল ও গাছগাছালির বড় ক্ষতি হলেও কৃষকদের পুলিশি ভয় দেখিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগেও জানিয়েছিলেন।
দিদারুল ইসলামের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তাদের নিয়ে শুনানি করেন। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে খাল পুনঃখননের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেন। জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত জমিতে খাল খনন করা হয়নি। রাস্তা নির্মাণ ও খাল কাটা মাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে রাখায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ এ বিষয়ে গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘রিট পিটিশনের পর ওই স্থানে এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কৃষকদের জন্য এ প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।’
শুধু বড়লিয়ায় নয়, বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি কাটার কারণে অসন্তোষ লেগে রয়েছে। জেলা প্রশাসন, পটিয়া পৌর মেয়র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। মেয়রের কাছে করা অভিযোগে ১৯ জন কৃষক স্বাক্ষর করেছেন। তাতে দাবি করা হয়, ৪নং ওয়ার্ডের করল ও বাঁকখালী মৌজায় ফসলি জমি, ক্ষেত ও গাছগাছালি রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হয়েছে। ঠিকাদারের লোকজন কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে জমির মালিকদের উল্টো মামলার ভয় দেখিয়ে আবাদি জমি ধ্বংস করছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানের কৃষকেরা জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়ে অভিযোগ করেছেন।
আশিয়া ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রাম মোজাহেরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘কোনো ধরনের নোটিশ বা অধিগ্রহণ না করেই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্ষেত-খামার ও চাষাবাদের জমি কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। মগের মুল্লুকের মতো জনগণকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জমি কেটে নেওয়া হয়েছে। উপকারের বদলে অপকার করা হচ্ছে।’ লেজে-গোবরে কাজ করে প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অপচেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, বড়লিয়া ও আশিয়ার বিভিন্ন স্থানে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। তিনি বলেন, আমার জমি না কাটলেও এলাকার অনেক মানুষের চাষযোগ্য জমি কেটে পুকুরে পরিণত করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক পূর্বকোণকে বলেন, ‘জনগণের ক্ষতি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে না। অধিগ্রহণের টাকা প্রকল্পে ধরা রয়েছে। অর্থ ছাড় না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা হয়নি।’ ৪০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী বাজেটে অধিগ্রহণের টাকা ছাড় হওয়ার আশা করছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে লোকজন বুঝবে কী ধরনের সুন্দর প্রকল্প হয়েছে।’
প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে ভারী বর্ষা শুরু হবে। খাল খনন ও বাঁধের কাজ নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ‘পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প’ একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ ৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট