সবুজ বনবীথি ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় সোলারের আলো বদলে দিয়েছে দুর্গম ২০ পাহাড়ি গ্রামের চিত্র। দুর্গম এই ২০ গ্রামের ১ হাজার ১৭ পরিবারকে বিনামূল্যে হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল বিতরণে ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম এসব পাহাড়ি গ্রামে ছিল না বিদ্যুতের কোনো সুযোগ-সুবিধা। তাই প্রাচীন আমলের কেরোসিনের কূপিবাতিই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। এমতাবস্থায় স্বাধীনতার ৫২ বছর পর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম এসব পাহাড়ি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা আলোকিত করতে এগিয়ে আসে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। দেয়া হয় হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল। এই সোলার প্যানেল প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের জীবন থেকে দূর হয়েছে কেরোসিনের কূপিবাতির অভিশাপ।
উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের আওতাধীন দুর্গম এই ২০ পাহাড়ি গ্রামের ১ হাজার ১৭টি পরিবার পেয়েছেন হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল। প্রতিটি পরিবারের জন্য ব্যয় করা হয় ৪৪ হাজার ৯৯৯ টাকা। এই সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা। প্রতিটি ঘরে লাগানো হয়েছে ৬টি করে বাল্ব। রয়েছে ফ্যান ব্যবহার, মোবাইল চার্জ ও টিভি দেখার সুযোগ। গ্রামগুলোর বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর ও কাঠুরিয়া। এসব গ্রামের কারোরই ছিল না সোলার প্যানেল ক্রয় করার মত সক্ষমতা। তাই বিনামূল্যের হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল পাওয়ায় খুশি এসব গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর সবাই।
উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে যুগেশ চন্দ্র কারবারি পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার প্রতিটি পরিবারের ঘরের চালে শোভা পাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া বিনামূল্যের হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল। এই সোলারের আলোয় আলোকিত পাড়ার প্রতিটি বসতবাড়ি। এখন বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা নেই এই পাড়ার মানুষের। কারো ঘরে চলছে টিভি, কারো ঘরে ঘুরছে ফ্যান। আবার কারো ঘরে দিনের বেলায়ও জ্বলছে সোলারের বাতি। ফ্যানের বাতাসে গা ভাসিয়ে পাড়ার ৬৫ বছর বয়সী পুর্ণসুধা চাকমা জানান, মৃত্যুর আগে ফ্যানের বাতাস আর সোলারের আলো দেখবো, তা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।
অনেক দেরিতে হলেও আমাদের আঁধার জীবনে আলো ফুটিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। পাড়ার আশাপূর্ণ চাকমা বলেন, হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল প্রাপ্তির মাধ্যমে আমাদের জীবন থেকে দূর হয়েছে কেরোসিনের কূপিবাতি ব্যবহারের অভিশাপ। এখন বাচ্চাদের লেখাপড়া, মোবাইল চার্জ, টিভি দেখা ও ফ্যান ব্যবহার সবই চলছে সোলারের ওপর নির্ভর করে। এই ২০ গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে দূরের গ্রাম নাড়াইছড়ি ও শীলছড়ি। উপজেলা সদর থেকে নাড়াইছড়ির দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার আর শীলছড়ির দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। তাছাড়াও যেসব গ্রামে হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল প্রদান করা হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশ গ্রামের অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। নেই সড়ক যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা। তারপরেও এসব গ্রামে পৌঁছে গেছে বিনামূল্যের হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল।
দুর্গম শীলছড়ি গ্রামের প্রদীপ চাকমা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর পর হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল প্রদানের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পূরণ হয়েছে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ জীবন চাকমা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমার ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের বিদ্যুৎবিহীন ছোট-বড় ২০টি গ্রামের ১ হাজার ১৭ পরিবারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল প্রদান করা হয়েছে। তবে আরো অসংখ্য গ্রাম রয়েছে যেসব গ্রামে আগামী ২০ বছরেও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এসব গ্রামের লোকজনকেও বিনামূল্যে হোম সিস্টেম সোলার প্যানেল প্রদানের দাবি জানান তিনি।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ