চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘পমপম’ টেলিগ্রাম গ্রুপ : তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করে আপত্তিকর ভিডিও বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মে, ২০২৩ | ১১:৫৮ অপরাহ্ণ

প্রথমে তরুণীদের ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করতো ‘পমপম’ টেলিগ্রাম গ্রুপের সদস্যরা। পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে দাবি করত অর্থ। অর্থ দিতে না পারলে সেসব তরুণীদের ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করা হতো। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে ভিকটিমদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্যসহ বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দিতো। আর যারা বাধ্য হয়ে ভিডিও কলে আসতো তাদের সেসব গোপন ছবি ও ভিডিও লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ছেড়ে দিত। সেসব ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইবারস ফি নিয়ে দেশ-বিদেশে কোটি টাকা আয় করত। মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছে। 

চট্টগ্রাম ভিত্তিক ‘পমপম’ টেলিগ্রাম গ্রুপ চক্রের মূল হোতা আবু সায়েম প্রকাশ মার্ক-সাকারবার্গকে চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আরও আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রোববার (২২ মে) রাজধানীর মালিবাগে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এইসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, সম্প্রতি আরাফাত নামে এক ভুক্তভোগী এবং তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গ্রুপে ছড়িয়ে দেয় সায়েম। এ ঘটনায় সায়েমের বিরুদ্ধে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটিকে শনাক্তের কাজ শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। সায়েমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আবু সায়েমই মার্ক-সাকারবার্গ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যতগুলো চ্যানেল ও গ্রুপ আছে তার অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। 

সায়েমসহ গ্রেপ্তার ৯ জন হলেন : মার্ক-সাকারবার্গ ওরফে আবু সায়েম, শাহরিয়ার আফসান অভ্র, বোগদাদী শাকিল, ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান, জসিম, ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ ও মিয়া ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট। সায়েম চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছে। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এই গ্রুপে ভুক্তভোগী তরুণীদের ফেসবুক হ্যাক ছাড়াও তাদের সাবেক প্রেমিকরাই নতুন নতুন কনটেন্ট সরবরাহ করতো। তারা সুসময়ে প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতো, পরে প্রতিশোধের নেশায় সেগুলোই তুলে দিতো ওই গ্রুপে। সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে, ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে, ৩০-৪০ সেকেন্ডের ভিডিও বানিয়ে আপলোড করা হতো। ভিডিও দেখে যারা ‘ফুল-ভার্সন’ দেখতে চাইতো, তাদের এক থেকে দুই হাজার টাকার প্রিমিয়াম সার্ভিস কিনতে হতো।’

তিনি বলেন, মার্ক-সাকারবার্গ এবং তার সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোয় সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও ও প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে। অন্যদিকে মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে সাতশ মানুষ। আমরা তাদের বিস্তারিত পরিচয় পেয়েছি। তাদের নিয়েও কাজ করছি। তরুণীদের অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এ ঘটনায় মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে তদন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সিআইডি প্রধান। এতে করে টেলিগ্রাম চক্রের হোতাদের পাশাপাশি তাদের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট