চট্টগ্রাম বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসামি হওয়ার পর দু’মাস ধরে ‘অসুস্থ’ ওসি-এসআই

নাজিম মুহাম্মদ 

৩ মে, ২০২৩ | ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ফৌজদারি মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে ‘অসুস্থ’ হয়ে গেছেন নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার ও এসআই আবদুল আজিজ। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন দু’জনেই। পুলিশের এই দুই কর্মকর্তার কী অসুখ হয়েছে- তা জানাতে পারেননি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে তারা জানিয়েছেন- ‘সুস্থ’ হয়ে চাকরিতে যোগ দিতে এলে নাজিম ও আজিজের কাছে এ সংক্রান্ত ডাক্তারি   কাগজপত্র চাওয়া হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থানেওয়া হবে।  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মো. মোস্তাকিম নামে এক যুবককে গত ১১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে সেই সময়। এ ঘটনার প্রায় দেড়মাস পর নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে ওসি নাজিম ও এসআই আজিজকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন মোস্তাকিম। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দায়ের হওয়া মামলাটি রেকর্ড করেন একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান।

 

মামলা রেকর্ড হওয়ার আগের দিন অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটি নিয়ে থানা ছাড়েন ওসি নাজিম। আর মামলা রেকর্ড হওয়ার পরপরই অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটিতে চলে যান এসআই আজিজ। এরপর থেকে অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে দু’জনেই টানা ৭০ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। ফৌজদারি মামলায় আসামি হওয়ার পর চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম রয়েছে। তবে মামলার আসামি হওয়ার পরও এই দুই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

 

ফৌজদারি মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা আসামি হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশীদ। তিনি জানান, পাঁচলাইশের ওসি ও এসআই দু’জনেই ফৌজদারি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাদেরকে অবশ্যই আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নিতে হবে। তবে তারা এখনো জামিন নেননি।

 

পিপি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আসামি হওয়ার পরপরই তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। পরবর্তীতে তারা যদি মামলার তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হন এবং তাদেরকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়- তবে চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন। কিন্ত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হলে তখনো বরখাস্তের আদেশ বহাল থাকবে। আদালতের রায়ে দোষী প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে।

 

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) আবদুল ওয়ারিশ জানান, মামলা রেকর্ড হওয়ার আগের দিন পাঁচদিনের ছুটিতে যান ওসি। পরে অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটি নিয়ে থানা ওসি আর থানায় আসেনি। আর মামলা রেকর্ড হওয়ার পরপরই অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটিতে চলে যান এসআই আজিজ। এরপর থেকে অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে দু’জনেই টানা ছুটিতে আছেন। ছুটি থেকে ফিরে কাজে যোগদান করলে তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র চাওয়া হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

যে কারণে মামলা : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাত বছর ধরে মাকে ডায়ালাইসিস করান যুবক মোস্তাকিম। নতুন বছরের শুরুতে সেখানে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনেরা। মোস্তাকিমও সেই আন্দোলনে যোগ দেন।  গত ১০ জানুয়ারি তারা চমেক হাসপাতালের প্রধান গেটে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন।

 

সে সময় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিচে মারধর করেন ওসি নাজিম উদ্দিন। এরপর তাকে থানায় নিয়ে আবার মারধর করা হয়। মারধরের সময় এসআই আবদুল আজিজ মোস্তাকিমকে বলেন ‘ওসি নাজিম স্যারের সাথে আর বেয়াদবি করবি?’

 

সেসময় ওসি নাজিম বলেন, ‘…রিমান্ডে এনে থানায় পিটাতে হবে, তারপর বুঝবি পুলিশ কী জিনিস!’ এরপর থানায় ধরে এনে মারধরের বিষয়টি ফাঁস করলে মোস্তাকিমকে ক্রসফায়ারের হুমকি  দেওয়া হয়।

 

ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। এতে মোস্তাকিমকে আসামি করা হয়।

 

গত ১১ জানুয়ারি এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোস্তাকিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ১৫ জানুয়ারি তাকে জামিন দেন আদালত। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তোলে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার ও এসআই আবদুল আজিজকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মোস্তাকিম।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট