চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

মধুর বসন্ত এসেছে ……

মিহরাজ রায়হান

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

পলাশের নেশা মাখি চলেছি দুজনে/ বাসনার রঙে মিশি শ্যামলে স্বপনে/ কুহু কুহু শোনা যায় কোকিলের কুহু তান/ বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে ……

 

কবিগুরুর সেই মধুর বাণী আজ ঘুরে ফিরছে বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে। প্রকৃতির পালাবদলে আজ এসেছে বসন্ত, সেই ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় আজ ভেসে যাবে প্রেম পিয়াসী তরুণ-তরুণী, ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। তবে শুধু তরুণ-তরুণী নয়, আজ সব বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন আজ।

 

আজ পয়লা ফাগুন। প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে সোনালি রোদে প্রকৃতি ভরে দিচ্ছে আকাশ। শীতের রিক্ততা ভুলে প্রকৃতিতে বইছে ফাগুনী হাওয়া। সেই পাগলা হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পল্লবে, দখিনা-বাতাসে শিহরণ জাগানোর দিন এলো। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত।’ আজ বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইনস ডে এলো হাত ধরাধরি করে। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করায় পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস।

 

শিমুল-পলাশ-অশোকের শাখা ভরে উঠেছে রক্তিম ফুলের সম্ভারে। গাছে গাছে ছড়িয়ে রয়েছে আমের মুকুল। অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া, নাগলিঙ্গমসহ কত শত ফুল।

 

‘ও পলাশ .. ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে/ জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে … লতা মুঙ্গেশকরের কালজয়ী এ গান শিমুল-পলাশকে ভীষণ মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এমন অজস্র গানের কথায় কিংবা কবিদের কবিতার ছন্দে উঠে এসেছে বসন্তের এই প্রতীক। পলাশ-শিমুল আমাদের বাঙালির ফুল। ফাগুনের-বসন্তের-ভালোবাসার ফুল। প্রকৃতিতে লেগেছে ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়া। ন্যাড়া গাছগুলোতে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা।

 

মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। তাই পয়লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সাথে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।

 

কবির কথা ধার করে কেউ বা বলছে, ‘নীরব কেন- ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়/ বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?’ দখিনা সমীর তার গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল? দখিনা বাতাসের সেই আকুলতার সঙ্গে এক সূত্রে মিলে গেছে ভালবাসার রং। পথে প্রান্তরে বেরিয়ে পড়েছে প্রেমিক-প্রেমিকার দল। কোলাহলের এই শহরেও তাদের দুরন্ত সময়। শরীরে বসন্তের বাতাস মেখে হবে আজ ভাব বিনিময়। পুরনো সম্পর্কটা আজ আরও বেশি জোরালো। কারও ক্ষেত্রে নতুন সম্পর্কটি পেয়ে গেছে পরিপূর্ণতা। রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে কিংবা রেস্তরাঁয় বসে চলছে মধুর আলাপচারিতা। এভাবেই বসন্ত দিনে ভালবাসার রঙে সজীব হয়েছে আজ দেশ। ‘ঝড়-বৃষ্টি পেরিয়ে দুর্ঘটনা এড়িয়ে তোমার কাছে আসা/ চাওয়া শুধু একটাই- একটু ভালবাসা …।’ আজ এমন তীব্র আকুলতায় ভেসে যাচ্ছে। বসন্ত দিনের উতলা বাতাসমাখা ভরদুপুরে পরস্পরের হাতটি ধরে হাঁটার দিন আজ।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট