চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডে অস্তিত্ব সংকটে দুই তীর্থস্থান

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

১৫ অক্টোবর, ২০২২ | ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থের অবিচ্ছেদ্য অংশ বাড়বানল ও লবনাক্ষ এখন বিলুপ্তির পথে। সুদীর্ঘকালেও এখানের মঠ-মন্দিরগুলোতে কোনরূপ উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগার পাশাপাশি আশপাশের ভূমি দখল হয়ে যাওয়ায় এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ তীর্থভূমি। কিন্তু এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই তীর্থ কমিটির। এতে হতাশ ধর্মপ্রাণ সনাতনীরা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কলিযুগের মহাতীর্থ ‘সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম’। বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী দেবাধিদেব মহাদেব বলেছেন, ‘কলিযুগে আমি চন্দ্রনাথেই অবস্থান করিব।’

মহাকাব্য রামায়ণ অনুযায়ী ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র তার ভাই লক্ষণ ও দেবী সীতাকে নিয়ে বনবাস যাপনকালে চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। এছাড়া পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী ‘মহারাজ দক্ষের যজ্ঞসভায় পতির (স্বামী মহাদেবের) নিন্দা শুনে রাগে আত্মাহুতি দেন সতী। সেইসময় প্রিয়তমা সতীকে হারিয়ে ক্ষুব্ধ দেবাধিদেব প্রলয়নৃত্য শুরু করলে একপর্যায়ে সতী দেবীর শরীরের একটি অংশ এসে পড়ে এই চন্দ্রনাথ ধামে। এছাড়া যুগে যুগে অসংখ্য মুনি-ঋষি ও দেব-দেবীর আগমন হয় এখানে। এ কারণে সীতাকুণ্ড একটি মহাতীর্থ হিসেবে গণ্য হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন সব তীর্থ ভ্রমণ করেও কেউ যদি সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থ দর্শন সম্পন্ন না করেন, তবে তীর্থ দর্শনের পুণ্যলাভ হয় না। এ কারণে প্রতিবছর সারা পৃথিবীর হিন্দুরা এখানে ছুটে আসেন একবার তীর্থ দর্শন করতে।

 

এদিকে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম তীর্থ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। মাঝে সীতাকুণ্ড পৌরসদরে চন্দ্রনাথ ধাম এর উত্তরে ছোটদারোগারহাট পাহাড়ের তলদেশে লবনাক্ষ ও দক্ষিণে বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে বাড়বানল। প্রকৃতপক্ষে চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থ দর্শন সম্পন্ন করতে হলে চন্দ্রনাথ, লবনাক্ষ ও বাড়বানল এ তিনটি অংশ অবশ্যই দর্শন করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সীতাকুণ্ড তীর্থ কমিটি সবসময় শুধুমাত্র চন্দ্রনাথ ধামের (পৌরসদর) মঠ-মন্দিরগুলো নিয়েই ব্যস্ত আছে। তারা লবনাক্ষ ও বাড়বানলে একবারও যাতায়াত করেন না। এতে সেখানকার মঠ-মন্দির নিয়েও তাদের তেমন কোন ভাবনা নেই।

সরেজমিনে সম্প্রতি লবনাক্ষ ও বাড়বানল ঘুরে মহাতীর্থের এই দুটি অংশের বেহাল দশা দেখা গেছে। পরিদর্শনকালে উপজেলার ছোট দারোগারহাট বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বদিকের পাহাড় তলদেশে লবনাক্ষ তীর্থে গিয়ে দেখা যায়, এই তীর্থের বেশিরভাগ মন্দিরের এখন কোন অস্তিত্ব নেই! দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এটি একটি মহাতীর্থ।

 

চারপাশে দখল করে কৃষিকাজ করছেন কিছু মানুষ। দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে। পরিস্থিতি এমনই যে, এসব মন্দিরে বসে পূজা-পার্বণ তো দূরের কথা প্রবেশ করার মতো অবস্থাও এখন নেই। ছোট দারোগারহাটের বাসিন্দা রবিচরন দাশ বলেন, লবনাক্ষ তীর্থ অলরেডি ধ্বংস হয়ে গেছে বলা চলে। মন্দিরে বসার মতো অবস্থাও নেই। তাই এখন আর নিয়মিত পূজা হয় না! শুধুমাত্র শিব চতুর্দশী তিথিতে হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘিরে কয়েকদিন পুরোহিত বসেন ও পূজা করেন। পরিদর্শনকালে এখানে পুরোহিতের দেখা পাওয়া যায়নি।

একই অবস্থা বাড়বকুণ্ড পাহাড়ের কয়েক কি.মি. পূবের পাহাড়ে অবস্থিত বাড়বানল তীর্থের মন্দিরগুলোরও। এ মন্দিরগুলো লবনাক্ষের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও সংস্কারের অভাবে ভেঙে ভেঙে পড়ছে সুপ্রাচীন মন্দিরগুলোর অবকাঠামো। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, মন্দিরের ভেতরে বুদবুদ দিয়ে গ্যাসের আগুন জ্বলছে।

 

স্থানীয়রা জানান, যুগ যুগ ধরে এখানে আগুন জ্বলে। এ কারণে এটির নাম হয়েছে বাড়বানল। এখানেও নিয়মিত পূজা হয় না বলে জানান বাড়বকুণ্ডের বাসিন্দা অনিল বর্মন। এ বিষয়ে জানতে বাড়বানলের পূজার দায়িত্বে থাকা পুরোহিত কালী নারায়নকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন কেটে দেন।

সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাশ বলেন, আসলে ঐ দুটি তীর্থের উন্নয়নের কথা আমারও মাথায় আছে। এখানে ভালো কাজে অনেক বাধা থাকে। তবুও কাজ করার চেষ্টা করছি। আগামীতে কমিটির মিটিংয়ে এটির উন্নয়নকাজ নিয়ে আলোচনা করব। সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই সংস্কার হবে।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট