চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ধৈর্যশীল মুমিনদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার
ফাইল ছবি

ধৈর্যশীল মুমিনদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার

অনলাইন ডেস্ক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১:০৬ অপরাহ্ণ

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বহু জায়গায় ধৈর্যশীল বান্দার জন্য অগণিত পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। নানা উপায়-উপকরণের এই দুনিয়ায় চলতে গিয়ে কখনো এমন সব বিপদ, বিপর্যয় ও বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, যেখান থেকে উত্তরণের কোনো দৃশ্যমান উপায় চোখে পড়ে না। তখন মনের ভেতর শুরু হয় অস্থির ছোটাছুটি, দুশ্চিন্তার উত্তাল তরঙ্গ আর হতাশার করাল ছায়া। মনে হয় “আর কত ধৈর্য ধরব? এই মহা সংকট থেকে মুক্তি আদৌ সম্ভব কি?” কিন্তু এটি আসলে ভুল ধারণা।

 

কারণ, কঠিনতম সেই মুহূর্তেও মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার সঙ্গেই আছেন। যদি সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে। আল্লাহ তাআলাই তাকে এমনভাবে বিপদমুক্ত করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, মুক্তির পথ ধৈর্যের ভেতরেই নিহিত।

 

কোরআনের বহু আয়াতে এ সত্য স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের ২০০তম আয়াতে বলা হয়েছে- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো।’

 

সুরা জুমারের ১০ নম্বর আয়াতে ঘোষণা- ‘ধৈর্যশীলদের প্রতিদান সীমাহীনভাবে প্রদান করা হবে।’

 

আবার সুরা বাকারার ১৫২ আয়াতে বলা হয়েছে- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।’

 

পবিত্র কোরআনে ‘সবর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত রাখা বা থামিয়ে রাখা। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হলো, নফসকে প্রকৃতির বিপরীতে দাঁড় করানো এবং আল্লাহর জন্য তা স্থির রাখা। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) ধৈর্যকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন:

 

১. সবর আলাত্ত্বাআত/ আনুগত্যে অটল : আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ পালনে স্থির থাকা, তা যত কঠিনই মনে হোক না কেন।

 

২. সবর আনিল মাআসি/ পাপা থেকে বিরত থাকা : আল্লাহ ও রাসুল যা নিষেধ করেছেন, তা যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, তা থেকে বিরত থাকা।

 

৩. সবর আলাল মাসায়েব/ বিপদে ধৈর্য ধারন : বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য ধারণ করা।

 

মহান আল্লাহ বলেন: ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারাহ : ১৫৫)

 

এ থেকে স্পষ্ট হয় যে দুনিয়া মূলত পরীক্ষা ও ধৈর্যের জায়গা। বিপদ-আপদ এখানে অপ্রত্যাশিত নয়, বরং স্বাভাবিক বাস্তবতা। মানুষের ঈমান যত দৃঢ়, পরীক্ষা তত কঠিন হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন: ‘সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয় নবীদের থেকে, তারপর যারা তাদের নিকটতম, তারপর যারা তাদের পরবর্তী।” (মুসনাদে আহমাদ, ৬/৩৬৯)

 

তবে পরীক্ষা কখনো কামনা করা উচিত নয়; বরং মুমিন সর্বদা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তাই প্রার্থনা করবে। একইসঙ্গে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে। হাদিসে আছে- ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যের শক্তি দান করবেন। আর কোনো দান ধৈর্যের চেয়ে উত্তম নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৬৯)

 

ইতিহাসে আমরা দেখি, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সবসময় পরীক্ষা করেছেন। সর্বাধিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে নবী-রাসুলদের থেকে। নবীজী (সা.)-এর জীবনই এর অনন্য উদাহরণ। মক্কার প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরত, ২৩টি যুদ্ধ পরিচালনা, কাবাঘরকে মুক্ত করা এবং অগণিত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করা; সবখানেই তিনি ধৈর্যের আলো ছড়িয়ে গিয়েছেন।

 

অতএব, মুমিন হতে হলে ধৈর্যকে জীবনসঙ্গী করতে হবে। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে প্রতিটি পরিস্থিতিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত পরীক্ষা হিসেবে মেনে নিতে হবে।

 

আজকের দুঃসময়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি সংকট, প্রতিটি সংগ্রাম, প্রতিটি আঘাতকে মোকাবিলা করার একমাত্র সঠিক পন্থাই হলো ধৈর্য। আল্লাহর বান্দা হয়ে তাঁর নির্দেশ মানা, পরীক্ষার সামনে অটল থাকা এবং ধৈর্যের ভেতরেই মুক্তির আলো খুঁজে পাওয়া।

 

তাই আসুন! আমরা প্রত্যেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশিত ধৈর্যকে আঁকড়ে ধরি। তবেই বিপদের অন্ধকার কাটিয়ে আল্লাহর বিশেষ সাহায্য আমাদের পথ আলোকিত করবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট